বাংলাদেশ প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

এখন স্কুলে থাকার কথা তার। বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করা, হৈচৈ আর ঘুরে বেড়ানোর সময়। এসবের কিছুই করতে পারছে না সে। শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে। এভাবেই দিন কাটছে ছোট্ট জান্নাতের। আকুতিভরা কন্ঠে আট বছর বয়সী জান্নাত মা-বাবার কাছে জানতে চায়, কবে নিজের পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারবে, স্বাধীনভাবে হাঁটতে পারবে, ছোটাছুটি করতে পারবে। যেভাবেই হোক কৃত্রিম পা হলেও নিজের পায়ে হাঁটতে চায় জান্নাত।

চার বছর আগে সিএনজিতে বাড়ি ফেরার পথে পুরো পরিবার এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে বলে জানান সিলেটের জৈয়ন্তা থানার চিকনাগুল গ্রামের অধিবাসী জান্নাতের দিনমজুর পিতা কয়েস আহমেদ। ট্রাকের ধাক্কায় তাদেরকে বহনকারী সিএনজি অটোরিকশা দুমড়েমুচড়ে যায়। মুহূর্তেই ছোট্ট জান্নাতের ডান পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। তখন থেকেই জান্নাতকে ক্র্যাচে ভর করে চলতে হয়, মাদ্রাসায় যেতে হয়।

মিডিয়ায় প্রকাশিত নিজের পায়ে হাটতে জান্নাতের আবেগজড়ানো মিনতি বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জার নজর এড়ায়নি। তিনি ওর খোঁজ-খবর নিয়েছেন, চিকিৎসার বিষয়ে ডাক্তারদের সাথে কথা বলেছেন।

পুনাক সভানেত্রী আজ (২৫ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জান্নাতকে দেখতে যান। তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সাথে জান্নাতের চিকিৎসা সম্পর্কে কথা বলেন। পুনাক সভানেত্রী জান্নাতকে পুতুল ও চকলেট উপহার দেন। তার জন্য পোশাক এবং ফল নিয়ে যান তিনি।

পরে পুনাক সভানেত্রী একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গ্যালারিতে থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে উৎসাহদানকারী টাইগার মিলনকেও দেখতে যান। টাইগার মিলনও ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। পুনাক সভানেত্রী এর আগেও টাইগার মিলনকে দেখতে গিয়েছেন, তাকে আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন তিনি।

পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পুনাক সভানেত্রী বলেন, জান্নাতের কথা পত্রিকায় পড়ার পর আমরা পুনাক থেকে তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। মেয়েটি কৃত্রিম পা হলেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। চিকিৎসকরা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, আমরা টাইগার মিলনকেও দেখে এসেছি। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

জনাব জীশান মীর্জা বলেন, পুনাক পুলিশ কর্মকর্তাদের স্পাউজদের একটি সংগঠন। গতানুগতিকতা ও নিজস্ব গন্ডির বাইরে বেরিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে পুনাক। এ প্রসঙ্গে তিনি যশোর রেলওয়ে স্টেশনে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা শাহজাহান, পায়ে পচন নিয়ে ফুটপাতে দিন কাটানো খোকনের মত আরও অনেকের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কথা উল্লেখ করেন।

টাইগার মিলন ও জান্নাতকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য তিনি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ সকলকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ পুলিশের সহযোগিতায় পুনাক ভবিষ্যতেও এ ধরনের মানবিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে বলে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

জান্নাতের বাবা-মা পুনাক সভানেত্রীর এ ধরনের উদারতায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা পুনাক সভানেত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।

এ সময় অতিরিক্ত ডিআইজি রখফার সুলতানা খানম, পুনাকের স্বাস্থ্য সম্পাদিকা ডা. প্রথমা রহমান এবং হাসপাতালে চিকিৎসকগণ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *