মামলা ও মালামাল লুটের কারণে ময়লার ভাগাড় স্থানান্তর সম্ভব হচ্ছে না-পৌর মেয়র

মোঃ কাওছার ইকবাল, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।

শ্রীমঙ্গল শহরের আলোচিত সমালোচিত এবং হাজারো শিক্ষার্থীর দূর্ভোগের কারণ পৌরসভার ময়লার ভাগাড়টি দীর্ঘ দুই দশক যাবৎ অপসারণ হচ্ছে না। চরম দূর্ভোগের পরও সংশ্লিষ্ট মহলের দ্বায়িত্ব নিয়েও সকলের মনে দেখা দিয়েছে হতাশা এবং জনমনে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। কোমলমতি ছাত্র ছাত্রী ও এলাকাবাসীর দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম, আবেদন নিবেদনের পর সৃষ্টি হয়েছে প্রচন্ড ক্ষোভের। চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত শ্রীমঙ্গলের জন্য এটি ‘কলংক তিলক’ হয়ে দেখা দিয়েছে।

এমন এক পরিস্থিতিতে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মোঃ মহসিন মিয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এলাকার সর্বসাধারণকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আইনী জটিলতার বিষয় বিবেচনা করত: উল্লেখিত বিষয়ে যেন কোন অনাকাঙ্খিত পরিবেশ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।

গত ১৮ মে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়রের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি সকলের সুবিধার্থে হুবহু তুলে ধরা হলো।
সম্মানিত প্রেস/ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে অবহতি করা যাচ্ছে যে, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার কলেজ রোডস্থ নালার ভাগাড়টি (ট্রেঞ্চিং গ্রাউন্ড) পৌরসভার সৃষ্টিলগ্ন থেকে স্থাপিত ছিল। তখন উক্ত এলাকায় জনবসতি (বাসা বাড়ি) স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা ছিল না।

কালের বিবর্তনে উক্ত এলাকার জনবসতিসহ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা স্থাপিত হলে আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী পৌরসভার চেয়ারম্যান/ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উক্ত এলাকার মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে ভাগাড়টি অপসারণের চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পৌরসভার রাজস্ব দিয়ে ভাগাড়ের জন্য জমি ক্রয় করা সম্ভব নয় বিধায় বিশ্ব ব্যাংকের আওতায় নগর উন্নয়ন প্রকল্পের ( UGIIP-II) মাধ্যমে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার জন্য ভাগাড় নির্মানের (ডাম্পিংগ্রাউন্ড) ভূমি জয়ের অর্থ সংস্থান করা সম্ভব হয়। তাই ভাগাড় নির্মানের জন্য ভূমি ক্রয় করার বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজার বরাবরে আবেদন করি।

তার প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল উপজেলার জেটি রোডস্থ প্রায় ২.৪৩৮৩ একর ভূমি ভাগাড় (ডাম্পিং ষ্টেশন) স্থাপনের জন্য অধিগ্রহনের ব্যবস্থা গ্রহন করেন এবং অধিগ্রহনের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনুমোদন করা হয় এবং ভূমির মূল্য বাবদ ১,৮৪,১৩,৫৯০/- টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা প্রদানের জন্য পত্র প্রেরণ করা হলে পৌরসভা উক্ত টাকা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয়ে জমা প্রদান করা হয়। বিগত ১০/০৭/২০১৩ইং তারিখে জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজার মহোদয়ের নির্দেশে ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা, মৌলভীবাজার উক্ত ভূমি পৌরসভাকে। সমঝাইয়া দেন (কপি সংযুক্ত)। উক্ত সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শ্রীমঙ্গল, সহকারী কমিশনার (ভূমি), শ্রীমঙ্গলসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। উক্ত ভূমি পৌরসভার নামে নামজারি করা হয়।

উক্ত ভূমি সমঝানোর পর জনৈক ব্যক্তি স্থগিতাদেশ চাহিয়া মহামান্য হাইকোর্ট রিট পিটিশন দাখিল করেন এবং মহামান্য হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করেন। বিগত ০৮/০২/২০১৭ইং তারিখ রিট পিটিশন মহামান্য হাইকোর্ট খারিজ করে দেন। বিগত ০৬/০৬/২০১৭ইং তারিখে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে পৌরসভার ডাম্পিং ষ্টেশনের জন্য ক্রয়কৃত জায়গায় সীমানা পিলার স্থাপনের কাজের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। ঠিকাদার ইট, বালু, সিমেন্ট অন্যান্য মালামাল ও সরঞ্জামাদি ডাম্পিং ষ্টেশনে নিয়ে গেলে স্থানীয় লোকজনসহ ৩নং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব ভানু লাল রায় ও স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার মিয়া বাধা প্রদান করার ফলে কাজটি বন্ধ হয়ে যায় এবং কাজের সাইটের সকল মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে থানায় মামলা প্রদান করা হয়, মামলার বিষয়টি উদ্ধর্তন সকলকে অবহিত করা হয়। মামলার বিষয়ে অদ্যবধি পর্যন্ত আইনগত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।

৩নং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব ভানু লাল রায় মৌলভীবাজার রোডে জেটি রোড এলাকার সড়কের উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য একটি পাকা গেইট নির্মান করেন। যাতে পৌরসভার কোন গার্ভেজ ট্রাক উক্ত এলাকায় যেতে না পারে। বর্তমানে অধিগ্রহনকৃত ভূমি নিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হবে মর্মে মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা রুজু করেন। মামলায় ৮ (আট) জনকে বিবাদী করা হয়। ১নং বিবাদী সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, ২নং বিবাদী সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়, ৩নং বিবাদী মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ৪নং বিবাদী বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট, ৫নং বিবাদী জেলা প্রশাসক, মৌলভীবাজার, ৬নং বিবাদী অতিঃ জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), ৭নং বিবাদী ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মৌলভীবাজার, ৮নং বিবাদী মেয়র, শ্রীমঙ্গল পৌরসভা।

এমতাবস্থায় ঠিকাদারের মালামাল লুটের বিষয়ে মামলা, মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ মামলা চলমান থাকায় ভাগাড়টি অপসারণের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আইনী জটিলতার বিষয়ে বিবেচনা করত: উল্লেখিত বিষয়ে কোন অনাকাঙ্খিত পরিবেশ পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে আপনাদের মাধ্যমে সর্বসাধারণকে অবহিত করা হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *