সুদক্ষ ও মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা দেবদাস ভট্টাচার্য‍্যের পদন্নোতিতে শ্রীমঙ্গলে আনন্দ উল্লাস

মোঃ কাওছার ইকবাল,শ্রীমঙ্গল।

ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি শ্রীমঙ্গলের কৃতি সন্তান মৌলভীভাজার জেলার গর্ব দেবদাস ভট্টাচার্য বিপিএম অতিরিক্ত আইজিপি(গ্রেড-২) পদে পদোন্নতি হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে।

দেবদাস ভট্টাচার্য্য বিপিএম ১৯৬৮ সালের ১ জানুয়ারী মৌলভীবাজার জেলার চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলার তপস্বীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম প্রয়াত দূর্গেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য্য, মাতার নাম প্রয়াত রাজলক্ষী ভট্টাচার্য্য। তিনি ১৯৮৩ সালে শ্রীমঙ্গল আছিদ উল্লা উচ্চ বিদ্যালয় হতে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। বৃন্দাবন সরকারী কলেজ হতে ১৯৮৫ সালে এইচএসসি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৮৫-১৯৮৮ শিক্ষাবর্ষে ১৯৯০ সালে রসায়ন শাস্ত্রে বিএসসি (অনার্স), ১৯৮৮-১৯৮৯ শিক্ষাবর্ষে ১৯৯৩ সালে এমএসসি পাশ করেন।

তিনি তিন কন্যা সন্তান ও এক পুত্র সন্তানের জনক। লেখালেখি করা পছন্দ করেন। তার লেখা প্রকাশিত উপন্যাস বইসমূহ- জননী জম্মভূমি, মনে মেঘের ছায়া, তারা ভালোবেসেছিল এবং তদন্ত সংক্রান্ত বই-‘ফৌজদারী মামলার তদন্ত ও তদন্ত তদারকি’।

শ্রীমঙ্গলের কৃতি সন্তান এবং একই বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তার পদোন্নতি জানতে পেরে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, স্যারের বিষয়ে বলবো, আমি অত্যন্ত খুশী। কারণ, আমি নিজেকে স্যারের পরিবারের সদস্য হিসেবে মনে করি। বহু আগে থেকেই স্যারের বাড়িতে আমার যাতায়াত। বিশেষ করে স্যারের এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিং এর মিটিং করেছি। আরও অনেক মিটিংএ স্যারের উদাহরণ তুলে ধরে বলেছি, এই এলাকার আছিদউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন স্যার, আজ স্যারের অবস্থান কোথায়। ডিআইজি থেকে প্রমোশন পেয়ে স্যার এখন অতিরিক্ত আইজিপি, একসময় আইজিপি হবেন। এর চেয়ে আমাদের কাছে গর্বের কি হতে পারে। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন, এজন্য স্যারের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ।

জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান বলেন, অবশ্যই এটা অত্যন্ত খুশীর সংবাদ। তিনি আমাদের কাছে অত্যন্ত সম্মানের। স্যারের এই পদোন্নতি আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। মৌলভীবাজার জেলাবাসীর সাথে আমিও আনন্দিত ও গর্বীত। এ জেলার কৃতি সন্তান স্যারের জন্য শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইলো।

পদোন্নতির পর প্রতিক্রয়া জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজিপি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, প্রথমেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই, আমাকে পদোন্নতি দিয়ে আরও কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন বলে। মন্ত্রী মহোদয়সহ আমার উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দের কাছেও আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এই পদোন্নতির ফলে আমার দ্বায়িত্ব অনেক বেড়ে গেলো। বিশেষ করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমার উপর আস্থা রেখে কর্মের স্বীকৃতি সরূপ আমাকে এই পদোন্নতি দিয়েছেন, আমিও যাতে এর মূল্য যথাযথ দিতে পারি সেই চেষ্টাই করে যাবো।

আর এলাকার মানুষের যে আনন্দ ও ভালবাসা দেখছি, কি বলবো? আমি আবেগাপ্লুত। পাশাপাশি আমার বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী ও আত্মীয় স্বজনের যেভাবে শুভেচ্ছা ও ভালবাসা পেয়ে যাচ্ছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমার প্রতি সবার যে ভালোবাসা, তা আমার জন্য বিশাল সম্পদ।

তিনি আরো বলেন, এই পেশায় থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমি মনে করি, বাকি সময়টাতে যদি দেশ ও জাতির কল্যাণে আরো বেশি কাজ করতে পারি তাহলেই আমার জীবন স্বার্থক হবে। পরিশেষে আমার প্রিয় জন্মভূমি শ্রীমঙ্গলের সবাইকে আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা।

দেবদাস ভট্টাচার্য্য শিক্ষা জীবন শেষে ১৫ তম বিসিএস(পুলিশ) ক্যাডারে নিয়োগ প্রাপ্তির পর পুলিশ একাডেমী, রাজশাহীতে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৯৭ সালের জুন মাসে সহকারী পুলিশ সুপার, কুড়িগ্রাম হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে খাগড়াছড়ি, সিলেট এবং সিআইডি-তে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পিটিসি-খুলনা এবং সিআইডিতে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশ সুপার হিসেবে কমান্ড্যান্ট, আরআরএফ-সিলেট, পুলিশ সুপার মাদারীপুর, বরিশাল, দিনাজপুর, বান্দরবান জেলায় কর্মরত ছিলেন। ২০০৯-২০১০ সালে জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করেন।

অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রাম এর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) ও (ট্রাফিক), ডিআইজি হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকায় কর্মরত ছিলেন।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণ ছাড়াও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম-সেবা) প্রাপ্ত হন।

উল্লেখ্য যে, গত ৩০ জুন ২০২২ইং ময়মনসিংহ রেঞ্জে ডিআইজি হিসেবে দেবদাস ভট্টাচার্য্য যোগদান করেন। ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য এর আগে সুনামের সাথে রংপুর রেঞ্জে চার বছর দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালন কালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা বা অপমৃত্যু, মাদক, নারী নির্যাতন এসমস্থ বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

এছাড়াও তিনি কোভিট-১৯ করোনা ভাইরাস মোকাবেলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার স্বপ্ন নতুন প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা এবং জাতির পিতা যে বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকায় সে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।

ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বিপিএম এক অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বলেন, “বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। আমাদের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শকে বুকে ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু তার কালজয়ী ভাষনে সবস্তরের মানুষের মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। গোটা দেশবাসী তার কথায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলে মুক্তিযুদ্ধে। বর্তমান প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে না, কিন্তু তাদের মাদক, সন্ত্রাস, দূর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে হবে। তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *