শ্রীমঙ্গলে ড্রাগন ফল চাষে চমক সৃষ্টি করেছেন হাজী কামাল হোসেন

(বাণিজ্যিক ভাবে চাষের স্বপ্ন দেখছেন)

মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি:

শ্রীমঙ্গলে নানা গুণ সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল চাষে প্রথমবারেই চমক সৃষ্টি করে বাণিজ্যিকভাবে চাষের স্বপ্ন দেখছেন মৌলভীবাজার জেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি ও শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ কামাল হোসেন। তার শখের বাগানের গাছে গাছে এখন শোভা পাচ্ছে ড্রাগন ফুল আর ফল। ফলের সঙ্গে আনন্দে দোল খাচ্ছে চাষি হাজী কামাল হোসেনের মনে। রোপণের পর নির্ধারিত মাসের আগেই প্রথমবারেই এমন সাফল্যে খুশিতে আত্মহারা তিনি। হাজী কামাল হোসেন মৌলভীবাজার জেলার জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার দিলবরনগর পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত বিশাল জায়গাজুড়ে হাজী কামাল হোসেনের বাগান। সমতল থেকে অনেক উচুঁ এ বাগানের চারদিকে সবুজের সমারোহ। বাগানের প্রবেশমুখের পূর্ব এবং দক্ষিণ পাশজুড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফল গাছ। গাছের অবলম্বন হিসেবে একটি কংক্রিটের ছয় ফুট পিলার পুঁতে দেয়া হয়েছে। ক্যাকটাসের মতো দেখতে ড্রাগন গাছগুলো পিলার বেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাছে সবুজ পাতার মাঝে শোভা পাচ্ছে ফল আর ফুল। ড্রাগন ফল মানেই ভিন্ন আমেজের রঙিন রসাল ফল।

চাষী ও সফল ব্যবসায়ী হাজী মোঃ কামাল হোসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, আমি মূলত শখের বসে আমার লেবু বাগানে সাথী ফসল হিসেবে ২০২১ সালে কয়েকটি ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করি। প্রথমবারেই ড্রাগন গাছগুলোতে বাম্পার ফলন দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি গতবছর আরো শতাধিক চারা রোপণ করি। এবছর বাম্পার ফল আর ফুল এসেছে ড্রাগন গাছগুলোতে। এমন সাফল্য দেখে আগামী বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষের স্বপ্ন দেখছি। তাই আরো শতাধিক ড্রাগন গাছ রোপণ করি। যেহেতু শখ করে প্রথম চাষ করেছি, ফলগুলো নিজে খাবো এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের মধ্যেও বিলিয়ে দেবো। আমার বাগানের সাফল্য দেখে উপজেলার অনেকেই এখন উৎসাহি হয়ে উঠছেন ড্রাগন ফল চাষে। তিনি তাদের যথাসাধ্য বুদ্ধি-পরামর্শ ও চারা দিয়ে সহযেগিতা করার কথাও জানান।

বাগানের মালিক চাষী মোঃ কামাল হোসেন জানান, আমি বিশাল জায়গাজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছি নানা ফল-ফসল। এতে বাণিজ্যিকভাবেও লাভবান। আমার বাগানে রয়েছে ১ লাখ কলা গাছ, দেড় লক্ষ আনারস, জারা, চায়নাসহ ২৫ হাজার লেবু গাছ, ২৫ হাজার নাগা মরিচের গাছ, চারশতাধিক সুপারি গাছ, খাসিয়া পান, তিন শতাধিক রেড লেডি পেঁপে এবং ছয় শতাধিক দেশি পেঁপে। এসব ফল বাজারজাত করে লাভবান হচ্ছি। তবে লেবু চাষে তিনি হতাশা ব্যক্ত করে লেবু চাষ করা থেকে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করেন। তিনি বলেন এ মৌসুমে লেবু বিক্রি করে কামলা খরচ এবং ঠেলা ভাড়াই ঠিকমতো আসছে না। বাগান পরিচর্যা ও কিটনাশক লেবু বাগানে গত বছরগুলোতে যে খরচ হয়েছে সে খরচই আসছে না। আনারস চাষেও একই অবস্থার কথা জানান তিনি।

বাগান ঘুরে ঘুরে আরও দেখা যায়,
বাগানে সাথী ফসল হিসেবে শোভা পাচ্ছে কাচা মরিচ, পেয়ারা, জাম্বুরা, কাঠাল, আম, কুশিয়ার, আতাফল কাটা জামির, আদা জামির, মৌসুমি সবজিসহ অন্যান্য বহু জাতের দেশিয় উদ্ভিদ।

ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, এখন থেকে আমি নিজে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করবো এবং অন্যকেও উৎসাহিত করবো। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় ড্রাগন চাষ লাভজনক। চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল আসতে শুরু করে। আমার বাগানে এক বছরে ফল আসে। আমি থাইল্যান্ডের ড্রাগন চারা লাগিয়েছি। ঢাকা থেকে আমার বন্ধুর মাধ্যমে এ গাছগুলো পেয়েছি। পুষ্টিগুণ, আকার-আকৃতি ও দামের কারণে বাজারে এই ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ হওয়ায় রোগ বালাইও কম। তাই চাষিরা সহজে এই ফল চাষ করতে পারবেন। দুই থেকে তিনটি চারা বা কাটিং লাগানো হলে প্রতি কাটিং থেকে ১২ থেকে ১৪টি ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্চায় চারা রোপণের ১ বছর থেকে ১৮ মাসের মাথায় গাছে ফল আসে। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ড্রাগন চাষের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখার প্রত্যাশা করছেন হাজী কামাল হোসেন।

ড্রাগন মূলত আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল। যা বর্তমানে বাংলাদেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে এ ফলের বিভিন্ন জাত আনা হয়। ড্রাগন ফলের গাছ এক ধরনের ক্যকটাস জাতীয় গাছ। এ গাছের কোন পাতা নেই। ড্রাগন ফলের গাছ সাধারণত ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই ফলটির। রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে কিংবা ক্যান্সার প্রতিরোধে ড্রাগন ফলের রয়েছে শক্তিশালী ভূমিকা।

(বাগান দেখতে আসা আমজাদ হোসেন)

বাগান দেখতে আসা সাপ্তাহিক বাংলাদেশ প্রতিক্ষণ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক মোঃ আমজাদ হোসেন বাচ্চু বলেন, শ্রীমঙ্গলের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হাজী কামাল হোসেন একজন সফল ব্যবসায়ী এবং সফল চাষীও। তিনি ড্রাগন চাষ করে প্রথমবারেই সফল হয়েছেন। তাঁর বাগান দেখতে এসে মুগ্ধ হয়েছি। বাগানে লাল ড্রাগন উৎপাদন করে অর্থনৈতিক
সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছেন তিনি। তাঁর বাগানে প্রতিটি গাছের ডগায় ডগায় ৩-৪টি করে দুলছে লাল ড্রাগন ফল। প্রথমবারেই শখের ড্রাগন চাষে চমক দেখিয়েছেন তিনি। তাঁর সাফল্যে অনুপ্রাণিত ও বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে চাষাবাদের চিন্তা করছেন আরও অনেকে। এতে করে উপজেলায় দ্রুত এ ফলের আবাদ ছড়িয়ে পড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: মহিউদ্দিন বলেন ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি’র মাত্রা বেশি থাকায় এই ফল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মানসিক অবসাদ দূর করে এবং ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। ড্রাগন ফল চাষ অবশ্যই লাভজনক। শ্রীমঙ্গলে পাহাড় টিলায় এবং পতিত জমিতেও এটার চাষ হয়। বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলে উপজেলার মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযুক্ত। সরকারিভাবেও ড্রাগন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ড্রাগন চাষে কেউ পরামর্শ এবং সহযোগিতা চাইলে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *