ব্যাংক একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের আইনি কাঠামো

করপোরেট পুনর্গঠনে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য ভ্যালু ক্রিয়েশনের মাধ্যমে টার্গেট ব্যাংক এবং ক্রেতা ব্যাংক উভয়েই আর্থিক সেবার উল্লেখযোগ্য উপযোগিতা সৃষ্টির মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে। এখানেই একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার আসল সৌন্দর্য বিদ্যমান। এ জন্যই প্রক্রিয়াটি বিশ্বজুড়ে চর্চিত একটি ব্যবসায়িক কৌশল। এ জন্যই এই প্রক্রিয়া শুধু ব্যাংক কোম্পানি না, যে কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রেই এই একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণ কৌশলটি প্রয়োগ করা হয়।

তবে বিজনেস কৌশল হিসেবে এর সফলতা তুলনামূলক কম। এমনকি উন্নত বিশ্বেও এ ক্ষেত্রে মাত্র ২০ শতাংশের মতো উদ্যোগ সফল হয়। যাই হোক, সারাবিশ্বে অর্থাৎ উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও কোনো কোম্পানিকে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা এবং দুর্বল কোম্পানিকে একটি ভালো কোম্পানির সঙ্গে একীভূত করে বা একটি ভালো কোম্পানি কর্তৃক দুর্বল কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করে উভয় কোম্পানির সমুদয় রিসোর্সের সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে এই বিজনেস কৌশলটির প্রয়োগ ও চর্চা থাকলেও, বাংলাদেশে এই একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণ সম্পর্কে ধারণা খুব একটা স্পষ্ট নয়। পূর্বের দুটি লেখায় প্রকাশিত নিবন্ধে উক্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া হয়েছে।

আজকের এই নিবন্ধে বাংলাদেশে ব্যাংক কোম্পানি একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের আইনি কাঠামোর ওপর আলোকপাত করা হবে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে প্রযোজ্য আইনকানুন সম্পর্কেও অনেকের মাঝে অস্পষ্ট ধারণা রয়েছে। অনেককে বলতে শোনা যায়, এদেশে এখনও একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণের জন্য আইন নেই। আসলে কথাটা সঠিক নয়। কারণ কোনো একটি মাত্র আইন করে এই প্রক্রিয়ার চুক্তি ক্লোজ করে লেনদেন সম্পন্ন করা যাবে না। একগুচ্ছ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। বর্তমানে আমাদের আর্থিক খাতের ব্যাংক শিল্পে একীভূতকরণ নিয়ে সংগত কারণেই যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, এই প্রেক্ষাপটে পূববর্তী নিবন্ধ দুটির পাশাপাশি এই নিবন্ধ কিছুটা হলেও কাজে আসবে বলে মনে হয়।

একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ সম্পন্ন করার জন্য যেসব আইন প্রয়োগ করা হয়, সেগুলোকে দুই ক্যাটেগরিতে ভাগ করা যায়। প্রথম ক্যাটেগরির আইন সাধারণ নিয়ন্ত্রক বিষয় নিয়ে ডিল করে, যা এ বিষয়ে সব ধরনের লেনদেনকে প্রভাবিত করে। যেমন আমাদের দেশে এই ক্যাটেগরির আইন হলো মূলত কোম্পানি আইন, পরিবেশ আইন, কম্পিটিশন আইন, সিকিউরিটিজ আইন, শ্রম আইন। আর দ্বিতীয় ক্যাটেগরির আইন হলো সেই আইন, যা সুনির্দিষ্ট কোনো শিল্পের অধীনে কোনো কোম্পানির লেনদেন প্রভাবিত করে। এগুলোকে বলা হয় শিল্পভিত্তিক বা ইন্ডাস্ট্রি স্পেসিফিক আইন, যা উক্ত শিল্পের কোনো কোম্পানির একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণের লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন বাংলাদেশে ব্যাংক শিল্পের কোনো কোম্পানি একীভূত বা অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১, যা ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে, এবং ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ্য, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩ রহিতক্রমে ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর এই ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনটি পাস এবং অবিলম্বে কার্যকর হয়। ফলে এই আইনটি নন-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর পঞ্চম খণ্ডে (ধারা ৫৮-৬৩) ব্যাংক কোম্পানি অধিগ্রহণের বিধান রয়েছে। উক্ত আইনের ৫৮ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক যদি উক্ত আইনের ২৯ ধারা এবং ৪৫ ধারার অধীন ব্যাংক নীতি সম্পর্কিত লিখিত নির্দেশনা পালন করতে একাধিকবার ব্যর্থ হয় বা আমানতকারীদের ক্ষতি হতে পারে এমন পদ্ধতিতে ব্যাংক কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়, সরকার উক্ত ব্যাংক কোম্পানি অথবা উহার এক বা একাধিক শাখা অথবা উহার অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে অধিগৃহীত ব্যাংকের সম্পদ ও দায় সরকারের কাছে হস্তান্তরেরও বিধান রয়েছে। এই আইনের ২৯ ধারায় ব্যাংক কোম্পানির অগ্রিম প্রদান নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। এই ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক অগ্রিম প্রদান নিয়ন্ত্রণে যে নির্দেশনা দেবে তা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। উক্ত আইনের ৪৫ ধারার ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক জনস্বার্থে বা মুদ্রানীতি এবং ব্যাংক নীতির উন্নতি বা আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে সাধারণভাবে সব ব্যাংক কোম্পানিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবে। ব্যাংকিং শিল্পে অধিকতর শৃঙ্খলা আনয়নের স্বার্থেই এ বিধান রাখা হয়েছে। সুতরাং এ দুটি ধারার বিধান অমান্য করলেও কোনো ব্যাংক কোম্পানি অধিগ্রহণের আওতায় আসতে পারে।

বাংক কোম্পানি আইনের ৭৭ ধারায় ব্যাংক কোম্পানির পুনর্গঠন এবং একত্রীকরণের বিধান রয়েছে। উক্ত ধারার ৪ উপধারায় ব্যাংক কোম্পানি পুনর্গঠন বা একত্রীকরণের বিধান রাখা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি একত্রীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় স্কিম প্রণয়ন করতে পারবে। একই ধারার ৫ উপধারায় উক্ত স্কিমে যেসব বিষয় থাকবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন পুনর্গঠিত ব্যাংক কোম্পানি বা ক্ষেত্রমতো হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের গঠন, নাম, নিবন্ধনকরণ, কার্যধারা, মূলধন, সম্পদ, ক্ষমতা, অধিকার, স্বার্থ, কর্তৃত্ব, দায়, কর্তব্য এবং দায়িত্ব এসব বিষয় একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণ স্কিমে সন্নিবেশিত থাকবে। তা ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি একত্রীকরণের ক্ষেত্রে স্কিমে নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের কাছে উক্ত ব্যাংক কোম্পানির ব্যবসা, সম্পত্তি, সম্পদ এবং দায় হস্তান্তরের বিষয়ও স্কিমে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এই ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৭৭ ধারার ১-১৬ উপধারায় ব্যাংক কোম্পানি পুনর্গঠন বা একত্রীকরণের বিস্তারিত বিধান দেওয়া আছে। ব্যাংক কোম্পানির ব্যবসা সাময়িকভাবে স্থগিতকরণের বিধানও এখানে রয়েছে। একই আইনের ৭৭-ক ধারায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক কোম্পানির দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিধানাবলি রয়েছে। উক্ত ধারার ২ উপধারায় বাধ্যতামূলক একত্রীকরণ বা পুনর্গঠনের বিধান করা হয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩ এর মাধ্যমে ৭৭-ক ধারাটি সন্নিবেশিত। আবার ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ৫০ ধারার বিধানটি এখানে উল্লেখযোগ্য। উক্ত ধারায় ফাইন্যান্স কোম্পানির স্বতঃপ্রণোদিত একত্রীকরণ ও পুনর্গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এ বিধান অনুযায়ী একটি ফাইন্যান্স কোম্পানি অন্য কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হতে চাইলে তা করতে পারবে। আবার কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি চাইলে নিজের অর্থায়ন ব্যবসার অংশবিশেষ অন্য কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করে বা দায়-সম্পদের পুর্নমূল্যায়নের মাধ্যমে পুনর্গঠিত হতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক-অনুমোদন দরকার।

এখানে উল্লেখ্য, ব্যাংক কোম্পানি এবং ফাইন্যান্স কোম্পানি– এই উভয় শ্রেণির কোম্পানিই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে নিজ নিজ ব্যবসা পরিচালনা করে। তা ছাড়া ফাইন্যান্স কোম্পানি যেসব আর্থিক সেবা প্রদান করে, ব্যাংক কোম্পানির আর্থিক সেবা তালিকায় অনুরূপ আর্থিক সেবাও আছে। ফাইন্যান্স কোম্পানি উন্নয়ন, অর্থায়ন ও কাঠামোগত অর্থায়ন ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। ব্যাংক কোম্পানিও অনুরূপ ব্যবসা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে অর্থায়ন ব্যবসার সংজ্ঞা অনুযায়ী ফাইন্যান্স কোম্পানি টার্ম ডিপোজিট গ্রহণ করতে পারবে এবং ঋণ প্রদান, বিনিয়োগ ও ইজারা অর্থায়ন বা লিজ ফাইন্যান্স কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে ব্যাংকের মতো ফাইন্যান্স কোম্পানি চাহিবা মাত্র পরিশোধযোগ্য আমানত গ্রহণ করতে পারবে না। ফাইন্যান্স কোম্পানির এই অর্থায়ন ব্যবসা ব্যাংক কোম্পানিতেও অন্তর্ভুক্ত, তবে ফাইন্যান্স কোম্পানির অর্থায়নে ব্যবসার পরিধি সীমিত। উভয় শ্রেণির অর্থায়ন ব্যবসার ধরন ও প্রকৃতি, একই নিয়ন্ত্রক সংস্থার লাইসেন্সের অধীন ব্যবসা পরিচালনা– এসব বিবেচনায় ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং ব্যাংক-কোম্পানি এই উভয় শ্রেণির কোম্পানিকেই ব্যাংকিং শিল্পের অংশ বলা যায়। তাহলে উপরোক্ত ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন এই উভয় আইনকে ইন্ডাস্ট্রি স্পেসিফিক আইনের আওতায় বিবেচনা করা যায়।

এবার একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে যেসব আইন (কমন আইন) সব ধরনের কোম্পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সেসব আইন সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক। প্রথমেই আসে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর কথা। ব্যাংক কোম্পানি এবং ফাইন্যান্স কোম্পানি– এই উভয় শ্রেণির কোম্পানিই প্রথমে কোম্পানি আইনের বিধান অনুযায়ী রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত হয়। তারপর ইন্ডাস্ট্রি স্পেসিফিক আাইনের বিধান অনুযায়ী নিজ নিজ ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি এবং ফাইন্যান্স কোম্পানিকে কোম্পানি আইনের বিধান মেনে চলতে হয়। অন্যান্য কোম্পানির মতো, কোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি একীভূত হলে বা পুনর্গঠিত হলে কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এর ২২৮ এবং ২২৯ ধারা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এই কোম্পানি আইনের ২২৮ ধারায় অবলুপ্ত কোম্পানির পাওনাদার সদস্যদের সঙ্গে আপস-নিষ্পত্তি করার বিধান রয়েছে। আবার একই আইনের ২২৯ ধারার বিধান অনুযায়ী ২২৮ ধারার অধীনে কোনো কোম্পানি এবং উক্ত ধারায় উল্লিখিত কোনা ব্যক্তির মধ্যে প্রস্তাবিত কোনো বন্দোবস্ত ও আপস-নিষ্পত্তি বা অনুমোদনের জন্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হয়। এভাবে হাইকোর্ট ডিভিশন কোনো একীভূতকরণ অনুমোদনের পূর্বে নিশ্চিত হয়– একীভূত হওয়া বা একত্রীকরণ স্কিম বাস্তবায়নে উক্ত স্কিমের অধীনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পাওনাদারদের এবং জনসাধারণের কোনো আপত্তি নেই। এই মর্মে আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট ডিভিশন যদি সন্তুষ্ট হন– উক্ত স্কিমের অধীনে কারও কোনো দাবি বা আপত্তি নেই, তখন একীভূতকরণের স্কিমে অনুমোদন প্রদান করেন। এর পর রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে একীভূতকরণ রেজিস্ট্রি করা হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মূলধন ইস্যু) বিধি ২০০১, এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিস্টিং রেগুলেশনস, ২০১৫– এসব আইনের বিধানও ব্যাংক-কোম্পানি একীভূতকরণে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

যদি লিস্টেড ব্যাংক কোম্পানি অন্য কোনো নন-লিস্টেড ব্যাংক-কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হয়, সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট ডিভিশনের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সিকিউরিটিজ কমিশন লিস্টেড কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির অনুমোদন প্রদান করবে এবং একীভূতকরণ স্কিম অনুযায়ী নন-লিস্টেড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে লিস্টেড কোম্পানির শেয়ার বা নগদ অর্থ গ্রহণ করবে। পক্ষান্তরে, যদি কোনো লিস্টেড ব্যাংক কোম্পানি অন্য একটি লিস্টেড ব্যাংক কোম্পানির সঙ্গে একীভূত হয়, সে ক্ষেত্রে একই উপায়ে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানি বা অ্যামালগেমেটেড ব্যাংক কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির অনুমোদন প্রদান করবে। তারপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিস্টিং রেগুলেশনস, ২০১৫-এর বিধান অনুযায়ী হস্তান্তরকারী লিস্টেড ব্যাংক-কোম্পানিকে ডি-লিস্টেড করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অ্যামালগেমেশন, একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণের মাধ্যমে যাতে ব্যাংক উদ্যোক্তারা একচেটিয়া আর্থিক বাজার দখল করে একক প্রভাব সৃষ্টি না করতে পারে, সে জন্য কম্পিটিশন আইন, ২০১৫ এ ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। তা ছাড়া চুক্তি আইন, ১৮৭২, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ার অর্জন, অধিগ্রহণ ও কর্তৃত্ব গ্রহণ) বিধিমালা, ২০১৮, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭ (একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ থাকলে প্রযোজ্য)। গ্রিন ব্যাংকিং-এর যুগে পরিবেশ আইনও এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।

এতক্ষণ ব্যাংক কোম্পানি একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণের জন্য প্রযোজ্য একগুচ্ছ আইন সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। এখানে অন্যান্য আইনের উল্লেখ করা হয়েছে এবং এসবের প্রয়োগ সম্পর্কে পরবর্তী সময়ে সুযোগ হলে আলোচনা করা হবে। তবে এখানে যেসব আইনের উল্লেখ করা হয়েছে, এই আইনগুলোর তালিকাই ব্যাংক একীভূতকরণ, অধিগ্রহণ এবং পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত কাঠামো সম্পর্কে একটা সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণ ধারণা দেবে বলে আশা করা যায়। পরবর্তী নিবন্ধে ব্যাংক কোম্পানি একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণের  চ্যালেঞ্জ এবং তা উত্তরণের উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করার প্রতিশ্রুতি রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *