ইংল্যান্ডের ইউরো জার্সি পাল্টানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের, মানছে না এফএ

ক্লাব ফুটবলে আপাতত বিরতি চলছে। সবাই ব্যস্ত আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ে। ঠিক এ সময়েই ইউরোপীয় ফুটবলে জাতীয় দলের জার্সি নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি অ্যাডিডাসের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে নাইকির সঙ্গে জুটি বাঁধার ঘোষণা দেয় জার্মান ফুটবল ফেডারেশন (ডিএফবি)। ২০২৭ সাল থেকে জার্মানির সব পর্যায়ের জাতীয় দলের জার্সি ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করবে বিশ্বের শীর্ষ ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নাইকি।

স্বদেশি প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাসের সঙ্গে ডিএফবির চুক্তি নবায়ন না করার বিষয়টি জার্মান সরকার পর্যন্ত গড়িয়েছে। দেশটির ভাইস চ্যালেন্সর রবার্ট হাবেক ডিএফবির তিনটি স্ট্রাইপ (অ্যাডিডাসের ট্রেডমার্ক) ছাড়ার বিষয়টিকে ‘দেশপ্রেমের অভাব’ মনে করছেন।

এবার নাইকিরই বানানো ইংল্যান্ডের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জার্সি নিয়ে দেশটির রাজনীতিবিদেরা সমালোচনা করেছেন। আগামী জুনে জার্মানিতে বসবে ইউরোর ১৭তম আসর। এর প্রায় ৩ মাস আগেই ইংল্যান্ড জাতীয় দলের জার্সি উন্মোচন করেছে নাইকি।

তবে গত সোমবার জার্সিটি উন্মোচনের পর থেকেই ইংল্যান্ডের সর্বমহলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জার্সির কলারে সেন্ট জর্জেস ক্রসের রং (ইংল্যান্ডের পতাকায় যে লাল ক্রস) পাল্টানো হয়েছে। এর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে আকাশি, নীল ও বেগুনি রং। তবে অনেকের চোখে এ ধরনের রংয়ের মিশ্রণকে ‘এলজিবিটি কমিউনিটি’র প্রতীক ‘রংধনু পতাকা’র মতো মনে হয়েছে।

বিষয়টি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও বিরোধীদলীয় নেতা স্যার কিয়ের স্টারমারেরও নজরে এসেছে। তাঁরা বিতর্কিত জার্সিটির সমালোচনা করে তা পাল্টানোর আহ্বান জানিয়েছেন। ঋষি সুনাক বলেছেন, ‘যখন আমাদের জাতীয় পতাকার কথা আসে, তখন বিষয়টি নিয়ে কোনোভাবেই ঝামেলায় জড়ানো উচিত নয়। কারণ, জাতীয় পতাকা আমাদের গর্ব ও আত্মপরিচয়ের উৎস। আমরা কে—জাতীয় পতাকা সেটার জানান দেয়। পতাকাকে তার মতোই নিখুঁত থাকতে দেওয়া উচিত।’

লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আজ রাতে ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। এই ম্যাচেই নাইকির বানানো নতুন নকশার জার্সি পরে মাঠে নামবে ইংল্যান্ড। তবে দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডক্টর ইয়ান ডার্চি প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স–এ তিনি লিখেছেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে কিয়ের স্টারমার যেন জাতীয় সংবাদমাধ্যমের বাইরে গিয়ে কথা বলেন এবং ইংল্যান্ডের নতুন রেপ্লিকা জার্সিতে পতাকার যে রং ব্যবহার করা হয়েছে, সেটার প্রতিবাদে আগামীকাল সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় আজ রাতে) ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে ইংল্যান্ডের সব সমর্থককে কালো জার্সি পরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

শুধু ইংল্যান্ডের সাধারণ মানুষই নন, খেলোয়াড়দের মধ্যেও নতুন জার্সি নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছেন। গত রাতে আজারবাইজানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব–২১ দল। সে ম্যাচে লিভারপুলের ইংলিশ ফুটবলার হার্ভি এলিয়ট পতাকা ঢাকতে তাঁর জার্সির কলার তুলে রাখেন।

তবে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও বিরোধীদলীয় নেতা কিয়ের স্টারমার বিতর্কিত জার্সি বদলানোর আহ্বান জানালেও ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) নিজেদের অবস্থানে অনড় থেকে পাল্টা ব্যাখ্যা দিয়েছে। এফএর দাবি, নতুন নকশার জার্সির মাধ্যমে ইংল্যান্ডের ১৯৬৬ বিশ্বকাপজয়ী দলকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

ইংলিশ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘১৯৬৬–এর নায়কেরা যে রঙের ট্রেনিং গিয়ার (অনুশীলনের সরঞ্জাম) পরেছিল, সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে কলারের পেছনে এটা ব্যবহার করা হয়েছে। ইংল্যান্ডের জার্সিতে সেন্ট জর্জেস ক্রসের রংয়ের পরিবর্তে ভিন্ন রঙের ব্যবহার এবারই প্রথম নয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *