শ্রীমঙ্গলে খাঁচা মাচা ছাড়াই বরবটি চাষে রায়হানের সাফল্য 

মোঃ কাওছার ইকবাল, শ্রীমঙ্গলঃ
বরবটি চাষের কথা ভাবতেই প্রথমে সামনে আসে জমি নির্ধারণ, মাচা তৈরি বা অন্যান্য প্রস্তুতির কথা। এসবের কারণে অনেক কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তবে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার খলিলপুরের তরুণ কৃষক রায়হান মাচা বা খুঁটি ছাড়াই বরবটি চাষ করে সাফল্যের চমক দেখিয়েছেন। আর রায়হানের এই সাফল্য দেখে এই জাতের বরবটি চাষে আগ্রহী উঠেছেন এলাকার অনেক কৃষক।
সিলেট বিভাগে এই প্রথম মাচা বা খুটি ছাড়াই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বামন বা খাটো জাতের বরবটি চাষে সাফল্য এসেছে।
।।।।
উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের খলিলপুর গ্রামের ২২ বছরের যুবক রায়হান আহমেদ শখের বশবর্তী হয়ে এই প্রথম মাচা বা খুটি ছাড়াই খাটো জাতের বরবটি চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। ইয়ার্ড লং বিন জাতের বরবটির গাছে ৪৫ দিনের মধ্যে ফলন চলে এসেছে। প্রতিটি বরবটির ওজন প্রায় ২০ থেকে ২৫ গ্রাম। গাছের দৈর্ঘ্য গড়ে ২৮-৩০ ইঞ্চি। একেকটি গাছে বরবটি ধরে ৩৮ থেকে ৪০টি।
এই বরবটির বৈশিষ্ট্য হলো-
তীব্র গরম সহনশীল নতুন এ জাতের বরবটি দেখতে সবুজ রং এর। পোকামাকড় বা রোগবালাইর ঝামেলা থেকেও এই জাতটি মুক্ত থাকবে। তবে পরিচর্যার অংশ হিসেবে শুরুতেই জৈব ও কেঁচো সার দিলেই চলবে। বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এ জাতের বরবটি চাষে পানি ব্যবহারের পরিমান অন্যান্য জাতের তুলনায় অনেক কম। বাড়তি খরচ বা পরিচর্যার ঝামেলা তেমন একটা নেই ।
বৈশিষ্ট অনুযায়ী একটি গাছ থেকেই ফলন পাওয়া যায় টানা তিন মাস। এর মধ্যে প্রতিটি বরবটির আকার-আকৃতি, রং বা গুণ–মান অন্য যেকোনো বরবটির মতোই। বরং পোকামাকড়ের ঝামেলামুক্ত। গাছে ফলন ধরবে ৪০ থেকে ৫৫ দিনের মধ্যে। একেকটি বরবটির দৈর্ঘ্য হবে গড়ে ২৮-৩০ ইঞ্চি।
সাধারণত অনেকেই শখের বসে বাসার ছাদে সবজি চাষ করতে চান। কিন্তু জায়গার সংকীর্ণতা, মাচা তৈরি বা অন্যান্য ঝামেলার কথা চিন্তা করে তা আর পেরে ওঠেন না। দিন দিন কৃষিজমির পরিমাণও কমছে।
সুখবর হলো, যে কেউ চাইলে এই বরবটির জাতটি ছাদে চাষ করতে পারবেন। দরকার সর্বনিম্ন ১০ ইঞ্চি আকারের একটি টব অথবা জিও ব্যাগ। টবে যেকোনো ধরনের মাটি হলেই চলবে। তবে পরিচর্যার অংশ হিসেবে শুরুতে আধা মুঠো ইউরিয়া এবং কেঁচো সার দিলেই চলবে। এটা কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই টবে চাষ করা যাবে।
শ্রীমঙ্গলের তরুন কৃষক রায়হান আহমেদ বলেন, লাল তীর কোম্পানির কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান এর পরামর্শে আমি বীজ সংগ্রহ করে এই প্রথম এটুকু জায়গায় বপন করি। এই বরবটি খুবই উন্নত জাতের এবং বেশ ভালোই ফলন এসেছে। আমি ভাবি নাই, নতুন এই জাতের বরবটির বীজ বপন করে এমন ফলন হবে। আশাকরি কৃষক ভাইয়েরা খাটো জাতের এই বরবটি চাষে অনেক লাভবান হবেন।
লাল তীর সীড লিমিটেডের ডিভিসনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, কোনো প্রকার মাচা তৈরি বা আলাদা খুটি ব্যবহারের ঝামেলা না থাকায় অতি সহজেই চাষ করার সুবিধাটি পাওয়া যাবে। বিশেষ করে সিলেটের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে এই জাতটির ব্যাপক চাষ করা সম্ভব। এছাড়াও বিভিন্ন ফসলের সাথী ফসল হিসেবেও এটি চাষ করে লাভবান হওয়া যাবে। প্রতি শতকে ৮০ থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত উৎপাদন হয়। এছাড়াও ছাদকৃষির জন্য এই জাতটি খুবই উপযোগী। এটি যেকোনো বাসার ছাদে টবে চাষ করে পরিবারে সবজির চাহিদাও সহজে মেটানো সম্ভব হবে।
সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের খলিলপুর গ্রামের মৃত মোঃ গিয়াস উদ্দিনের সন্তান মোঃ রায়হান আহমেদ। খলিলপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা তরুণ কৃষক রায়হানের বয়স সবে মাত্র ২২ ছুয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষক পিতার সাথে ছোটবেলা থেকেই শখে শখে কৃষি কাজে লেগে থাকতো। মা, বাবা, দুই ভাই ও এক বোনসহ ৬ সদস্যের সুন্দর সাজানো সংসার ছিলো রায়হানের। ২০১৪ সালে পিতার মৃত্যুর পর অল্প বয়সেই পরিবার ও পরিবারের সকল কাজের দ্বায়িত্ব চলে আসে রায়হানের উপর।
ছোটবেলায় থেকেই বাবার সাথে মাঠে কৃষি কাজে সহায়তা করা থেকেই কৃষির প্রাতি আলাদা আসক্তি জন্মে রায়হানের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকা ঘিরেই রয়েছে রায়হানের পারিবারিক বলয়। ধান চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সব্জির চাষ তাদের বংশানুক্রম ঐতিহ্য। খলিলপুর গ্রাম জুড়েই রয়েছে রায়হানের বংশের পরিধি। কৃষক পরিবারের সদস্য হিসেবে রায়হানও গর্ব অনুভব করে।
রায়হানের সাথে আলাপ কালে সে বলে, আমরা বংশানুক্রমে কৃষি পরিবার। তাই নিজেকে একজন কৃষক পরিচয় দিয়ে গর্বিত হই। আমাদের পরিবারকে কৃষি পরিবার বললেও ভুল হবেনা। পিতার মৃত্যুর পর লেখাপড়ার পাশাপাশি পুরোদমে কৃষি কাজে জড়িয়ে পরায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। এটি আমাকে সবসময় পীড়া দেয়। কৃষিতে আমি আরও অবদান রাখতে চাই। এজন্য সরকার ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের প্রতি আমার আহ্বান, যথা সময়ে এবং যথাযথভাবে কৃষকের পাশে দাড়ান। আমাদের মতো তরুণ কৃষকরাই কৃষি বিপ্লব ঘটিয়ে দেশের উন্নয়নের মাইল ফলক রচনা করবে, ইনশাআল্লাহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *