শাহরিয়ার শাকিল, বড়লেখা প্রতিনিধিঃ
“মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি, দাড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে, যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই।” মধুকবি নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের কবিতার এই লাইনগুলোর সাথে একেবারেই মিলে যায় মৌয়ালদের জীবন। এর বাস্তব প্রতিচ্ছবি পাওয়া গেলো মৌচাষী ইসলাম উদ্দিনের খামারে।
মাত্র আড়াই হাজার টাকার পুঁজি ও একনিষ্ঠ পরিশ্রমের মাধ্যমে মধু চাষ করে সফল হয়েছেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুছেগুল গ্রামের ইসলাম উদ্দিন।
দীর্ঘ প্রায় ৬ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন মৌ চাষ প্রকল্প।এতে বেশ লাভবানও হয়েছেন তিনি।তার দেখাদেখি গ্রামের এখন অনেকেই মধু চাষে ঝুঁকে পড়েচেন বলে জানিয়েছেন নতুন মধু চাষিরা।
মৌ-চাষি ইসলাম উদ্দিন জানান,আজ থেকে প্রায় ৬ বছর আগে মৌমাছি থেকে মধু আহরণ করার ধারণা আসে তার। সেই
চিন্তা থেকেই বক্সে মৌমাছি পালনের চিন্তা আসে তার মাথায়।
ইসলাম উদ্দিন তার এলাকার বড় ভাই নজরুল ইসলামের সহযোগিতায় রানী মৌমাছি সংগ্রহের কৌশল রপ্ত করেন। বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেন রানী মৌমাছি। তার পর থেকেই তার আর মৌমাছি পালনে সমস্যা হয়নি। মৌমাছি পালন ও মধু সংগ্রহ করে তিনি এখন বেশ সফল।
ইসলাম উদ্দিনের বাড়িতে ঢুকতেই এক পাশে দেখা গেলো সারি সারি মৌ চাষের বাক্স। বাক্সগুলো পরিচর্যায় মহাব্যস্ত তিনি।ঘুরে ঘুরে বাক্স খুলে মৌচাকগুলো দেখালেন আমাদের।
কেমন আছেন এখন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিনিধিকে ইসলাম উদ্দিন বলেন, “মৌ চাষ করে আল্লাহর রহমতে পরিবারের সবার সাথে ভালভাবে জীবন যাপন করছি। মৌ বাক্স যতো বাড়াতে পারবো, আমার আয় ততো বেশি হবে। তবে করোনাকালীন সময়ে মধুর তীব্র সংকট দেখা যায়। আশা করছি আগামী বছর থেকে মৌ বাক্স বাড়াতে পারবো ইনশাল্লাহ।”
তিনি আরও বলেন, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তেমন কোনো ফুলের সমারোহ থাকে না। তাই মৌমাছি খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না।
ইসলাম উদ্দিন দুঃখ করে বলেন, এখন কৃষকরা তাদের জমিতে পরিবেশবিরোধী ভয়াবহ অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করায় মৌমাছির ফুলের রেণু সংগ্রহ করতে গিয়ে বিষের কারণে মরে যায়। এ জন্য দিন দিন মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিপর্যয় ঘটছে।মানবকুল একটু সচেতন হলে সংগৃহীত মধু থেকে জটিল রোগ বালাই নাশক ওষুধসহ উপাদেয় এবং পুষ্টিমানসমৃদ্ধ খাবার যোগানের ব্যবস্থা আরো বেশি করা যেতো। তার মধু উৎপাদন দেখে এলাকার অনেক আগ্রহী যুবক ও সৌখিন ব্যক্তি তার কাছ থেকে মধু চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন বলে তিনি তার মধু চাষের বিষয়গুলো নিশ্চিত করেন।