টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ৬ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।ঘরবাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় গৃহপালিত পশু নিয়েও মানুষ বিপাকে পড়েছেন। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কয়েকটি উপজেলার সাথে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
রবিবার বৃষ্টিপাত কম হলেও উজানের ঢলের কারণে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। ফলে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সারি, গোয়াইন, ধলাইন, সুরমা ও কুশিয়ার ডাইক ভেঙ্গে যেসব উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিলেট সদর, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট। কোথাও ডাইক ভেঙ্গে নদীর পানি ঢুকছে, কোথাও আবার তীর উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। জেলার সবগুলো নদীর পানিও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জানা গেছে, সিলেটের সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের (বর্তমানে সিটি করপোরেশনের ৩৯নং ওয়ার্ড) পীরপুর এলাকায় সুরমা নদীর ডাইক ভেঙ্গে শুক্রবার থেকে পানি প্রবেশ শুরু করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের নির্দেশে সিটি করপোরেশন সাময়িকভাবে বাধ দিয়ে পানি প্রবেশ বন্ধ করলেও টানা বৃষ্টিপাতে আবার ও পানি প্রবেশ শুরু হয়েছে। এছাড়া সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী নগরীর বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
পাউবো কর্মকর্তারা জানান, সিলেট অঞ্চলের গেল কয়েকদিনের বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয়েছে উজান থেকে নেমে আসা ঢল। ভারতের মেঘালয়, ত্রিপুরা ও আসাম প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রæত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল রবিবার বৃষ্টিপাত না হলেও উজানের ঢলের কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট এবং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব গ্রামের সঙ্গে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। এ উপজেলায় ফসলি জমিও তলিয়ে গেছে। কানাইঘাট উপজেলায় সুরমা নদীর প্রবল ঢলে উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের কুওরঘড়ি ডাইকে ভাঙ্গন দেখা দেয়। উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম, বড়চতুল, লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব, সাতবাঁক, কানাইঘাট সদর, দিঘীরপাড় পূর্ব ও দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা ও রাস্তা-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কানাইঘাট বাজার কোমর পানি থেকে হাঁটু পানি বিরাজ করছে। কানাইঘাট-চতুল-দরবস্ত সড়ক, কানাইঘাট-গাছবাড়ী গাজী বোরহান উদ্দিন সড়ক, কানাইঘাট-সুরইঘাট সড়ক ও কানাইঘাট-শাহবাগ-জকিগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট শহরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার সারী-গোয়াইনঘাট সড়কের লাফনাউট, আলীরগাঁও কলেজ, আলীরগ্রাম, বেকরা ব্রিকফিল্ডসহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠেছে। গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়ক, গোয়াইনঘাট-সোনারহাট সড়কের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল, মানিকপুর ও কাজলসার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সুরমা কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে ও উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা থাকায় তলিয়ে গেছে পৌরসভার জকিগঞ্জের প্রধান ডাকঘর, প্রাণী সম্পদ অফিস, স্থলশুল্ক স্টেশন, জকিগঞ্জ ফাজিল সিনিয়র মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলারও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, সিলেটে ১৮ মে পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে রাতের বেলা বৃষ্টি বেশি হবে।