সালামির ধারা ভেঙে ফেলেছে অকর্মরা!

একটা সময় বাড়ির মুরুব্বিরা বা বয়সে বড় যারা তারা ঈদের দিনে সালামি দিতেন, এখনো দেন। উনাদের যারা সালাম করতেন তাদের এবং অবশ্যই বয়সে ছোট বা অধীনস্তদের। পুরো বিষয়টাই মিষ্টি মধুর একটা রীতি। কোনো জোরজবরদস্তি তো ছিলই না বরং ছোটরা অনেক সময় সালামি নেওয়ার সময় লজ্জা মিশ্রিত মিষ্টি হেসে বলতো, থাক লাগবে না। বড়রা তাও জোর করে হাতে একটা নোট গুঁজে দিয়ে বলতেন রাখো রাখো আইসক্রিম কিনে খেও। বড়ই সুন্দর মনোরম মধুর দৃশ্য যার দেখা কেবল ঈদের দিনেই মিলতো।

অবশ্যই সদ্য বিবাহিত নববধূ বা মেয়ে জামাই প্রথম শ্বশুরবাড়িতে সালাম করে শশুর-শাশুড়ির থেকে কত টাকা সালামি পেলেন সেটাও বেশ আলোচ্য একটা বিষয় ছিল যা অবশ্যই উপভোগ্য এখনো আছে হয়তো!

এছাড়া ঈদের দিনে কিছু মিষ্টি কিঞ্চিৎ অম্ল মধুর কথা কানে আসতো শ্যালক-শালিকা আর দুলাহভাইদের সালামি বিষয়ক দেন দরবার ও কথোপকথন এর যা খুবই মজার। তখন কেউ কেউ খেতাব পেতেন কিপটে দুলাহ ভাই, কেউ কেউ আবার দিল দরিয়া দুলাহ ভাই। যে যেই খেতাবই পাক, এসব ঘটনা ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে খুবই পরিপূরক ভূমিকা রাখতো তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সময় গড়ালো…,এরপর বয়সে ছোটরা ঈদের আগের দিন থেকেই সালামির আশায় থাকতো, কাল কখন মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা- নানী, আঙ্কেল আন্টিরা সালামি দেবেন, কে যে কত দেবে? সেগুলো দিয়ে তারা কি কি করবে! সেই পরিকল্পনায় একেবারেই মশগুল। তখনও তারা জানতো না কতকাল কত সালামি জুটবে আর যারা সালামি দিতেন তারা বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই দিতেন যার যেমন ইচ্ছে বা সংগতি কোনো জোর জবরদস্তির প্রশ্নই ওঠে না।

ঈদের পরদিন বাড়ির অন্দর মহলে কান পাতলে কানে আসতো মা, চাচী-মামী ও বিবাহিত খালা-ফুফুদের ফিসফিসানী কে তার স্বামীকে সালাম করে কত সালামি পেয়েছে আর কে সালাম করার আগেই কি পেয়েছেন! অথবা গোমড়া মুখে কারো বয়ান তাকে কোনো সালামি দেওয়া হয় নাই বা সে সালাম করে নাই কারণ কিছু একটা তো অবশ্যই…! তবে সবকিছুই খুবই স্বাভাবিক সাধারণ বিষয় আলোচনা, একটুও বাড়তি বা চাপানো বা লোক দেখানো কিছু ছিলো না।

সমাজের সঙ্গতিপূর্ণ লোকজনদের বাসায় ঈদের দিন বাসার কাজে সাহায্যকারী লোকজন, বুয়া, ড্রাইভার ইত্যাদি শ্রেণির মানুষদের চোখেও হাসি চিকচিক করতো সালামি পাওয়ার পর। গ্রামের অপেক্ষাকৃত গরিব শ্রেণির ছেলে-মেয়েরা শহর থেকে ঈদ করতে যাওয়া কারোর কাছ থেকে সালামি পেলে খুশিতে তাদের চোখও চকচক করে উঠতো কারণ ওদের খুশির সাথে চোখে মিশ্রিত থাকতো আনন্দ অশ্রু। এসব দৃশ্যও অভাবনীয় সুন্দর, যে একবার দেখেছে তা সারা জীবন ওই চোখগুলো মনে থাকবে।

সময় আরও এগোলো, এখন ঈদের দিন আসার আগে থেকেই কিছু মানুষের জল্পনা কার কাছ থেকে কত সালামি আদায় করা যাবে! অনেক সময় আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়া এই পরিমাণ সালাম দিতে হবে! এর কম হলে নেবে না! এবং এর চেয়েও বড় চিন্তার বিষয় যে এই বিষয়গুলোতে শুধু ছোটরা না বড়রাও সমানভাবে নিয়োজিত। রীতিমতো আগে থেকে পয়গাম পাঠানো সালামি দিতে হবে জানিয়ে দেখা করতে আসা, দুলাহ ভাই রা তো ব্যাপক চিপায়, ঈদের উপহার আবার নির্দিষ্ট এমাউন্ট এর সালামি!