টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগ

 

ডেস্ক রিপোর্টঃঃ

সমালোচনার মুখে এবং তদন্তে সহায়তার স্বার্থে যুক্তরাজ্যের ইকোনোমিক সেক্রেটারির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক।

টিউলিপ নিজেই সোশ্যাল হ্যান্ডল এক্সে (সাবেক টুইটার) এক টুইটে এ তথ্য জানিয়েছেন।

টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টার (ইকোনমিক সেক্রেটারি) ছিলেন।

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে টিউলিপের ভোগ-দখলে থাকা দুটি ফ্ল্যাটের তথ্য প্রকাশ্যে আসে।

এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা সাংবাদিককে হুমকি, এক নারীকে হেনস্তা করানোসহ টিউলিপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় দলের ভেতরে-বাইরে চাপে পড়েন তিনি। তার পদত্যাগের দাবি করেন বিরোধিদলের নেতারাও। তবে এতদিন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার টিউলিপের পক্ষে ছিলেন।

এদিকে, পদত্যাগ করলেও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি পদত্যাগপত্রে লেখেন, একটি স্বাধীন পর্যালোচনা নিশ্চিত করেছে যে আমি মন্ত্রিত্বের কোড লঙ্ঘন করিনি এবং আমি ভুলভাবে কাজ করেছি বলে কোনো প্রমাণ নেই। তবুও, সরকারের বিভ্রান্তি এড়াতে আমি নগর মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।

টিউলিপ সিদ্দিক তার পদত্যাগপত্রে লেখেন:

“প্রিয় প্রধানমন্ত্রী
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমার প্রতি আপনি যে আস্থা প্রদর্শন করেছেন, তার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মন্ত্রীদের মানদণ্ডবিষয়ক আপনার স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি আমার স্বপ্রণোদিত আবেদন দ্রুত ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করেছেন এবং আমার বর্তমান ও অতীত আর্থিক এবং বাসস্থানসংক্রান্ত তথ্য বিস্তারিতভাবে শেয়ার করার সুযোগ দিয়েছেন।

আপনি অবগত আছেন, আমার অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করার পর, স্যার লরি নিশ্চিত করেছেন, আমি মন্ত্রিত্ববিধি ভঙ্গ করিনি। তিনি উল্লেখ করেছেন, আমার মালিকানাধীন বা বসবাসকৃত সম্পত্তি বা আমার কোনো সম্পদ বৈধ উপায় ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে এসেছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।

আমার পারিবারিক সম্পর্ক সর্বজনবিদিত এবং যখন আমি মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হই, তখন আমি আমার সমস্ত সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের তথ্য সরকারের কাছে জমা দিয়েছিলাম।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যাপক পরামর্শের পর আমাকে আমার স্বার্থপত্রে উল্লেখ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, আমার ফুফু বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশসংক্রান্ত বিষয় থেকে (আমার) বিরত থাকা উচিত, যাতে স্বার্থের সংঘাতের কোনো সন্দেহ না থাকে।

আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই, এসব বিষয়ে আমি সর্বদা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ থেকেছি এবং কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুসারে কাজ করেছি।

তবে এটি স্পষ্ট, অর্থনৈতিক সচিব হিসেবে আমার ভূমিকা সরকারি কাজের জন্য একটি বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। আমার আনুগত্য সব সময় এই লেবার সরকার এবং তার জাতীয় পুনর্নবীকরণ ও রূপান্তরের কর্মসূচির প্রতি থাকবে। তাই আমি আমার মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আপনার সরকারে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি পেছনে থেকে যে কোনোভাবে সরকারকে সমর্থন করতে থাকব।

শুভেচ্ছান্তে-
টিউলিপ সিদ্দিক এমপি”

এদিকে, টিউলিপের পদত্যাগের পর লেবার এমপি এমা রেনল্ডসকে ট্রেজারির নতুন অর্থনৈতিক সচিব নিযুক্ত করা হয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিক ২০১৫ সালে উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেইট আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন, যে আসনটি প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের আসন হবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাসের লাগোয়া।

মন্ত্রী হিসাবে টিউলিপ সিদ্দিকের দায়িত্ব ছিল যুক্তরাজ্যের আর্থিক বাজারে দুর্নীতি মোকাবেলা করা।

গত মাসে তার পরিবারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবকাঠামোগত ব্যয় থেকে ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে নাম প্রকাশ করা হয়। তার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি আওয়ামী লীগের প্রধান। গত বছর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে যেতে বাধ্য হন।

লন্ডনে তার খালার সহযোগীদের সাথে সম্পর্কিত সম্পত্তি ব্যবহারের কারণে সিদ্দিক তীব্র তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। টিউলিপ সিদ্দিক জোর দিয়ে বলছেন যে তিনি কোনও ভুল করেননি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষণশীল নেতা কেমি ব্যাডেনোচের কাছ থেকে তাকে মন্ত্রী পদ থেকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে এক চিঠিতে স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন যে তার জন্য “দরজা খোলা রয়েছে”। মন্ত্রী পর্যায়ের মানদণ্ড সংক্রান্ত স্বাধীন উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস বলেছেন যে তিনি সিদ্দিকের সাথে সম্পর্কিত “অন্যায্যতার কোনও প্রমাণ সনাক্ত করতে পারেননি”।

“লন্ডনের সম্পত্তির মালিকানা বা দখলের ক্ষেত্রে টিউলিপ সিদ্দিক অথবা তার স্বামীর নেয়া পদক্ষেপের সাথে সম্পর্কিত কোনও অনৈতিকতার প্রমাণ আমি খুঁজে পাইনি, যদিও এটি সংবাদমাধ্যমের মনোযোগের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।”

“একইভাবে, আমি আওয়ামী লীগ (অথবা এর সহযোগী সংগঠন) বা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সাথে জড়িত প্রশ্নবিদ্ধ সম্পত্তির মালিকানা বা দখল সম্পর্কিত কোনও অস্বাভাবিক আর্থিক ব্যবস্থার কোনও ইঙ্গিত পাইনি।”

“এছাড়াও, আমি এমন কোনও প্রমাণ পাইনি যে মিসেস সিদ্দিক এবং/অথবা তার স্বামীর আর্থিক সম্পদ, যা আমার কাছে প্রকাশিত হয়েছে, বৈধ উপায় ছাড়া অন্য কোনও উপায় থেকে এসেছে।”

কিন্তু তিনি বলেন, এটা “দুঃখজনক” যে সিদ্দিক তার ঘনিষ্ঠ পরিবারের বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের “সম্ভাব্য সুনাম ঝুঁকি সম্পর্কে ততটা সতর্ক ছিলেন না”।