শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ
শ্রীমঙ্গলে স্কুলছাত্র ফাহাদ রহমান মারজান (১৭) কে হত্যা করেছে তার সহপাঠীরা। আলোচিত এই মৃত্যুর তদন্তে নিহত ফাহাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিডিআর যাচাই-বাছাই করে সন্দেহজনক ১৫ জনের নাম উঠে আসে। এর মধ্যে কয়েকজনকে ফাহাদের স্কুলের সহপাঠী বলে নিশ্চিত করেছে তদন্ত কর্মকর্তা। গত ১২ অক্টোবর শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনের অদূরে শাহীবাগ রেল লাইনের পাশ থেকে রক্তাত্ব আহত অবস্থায় ফাহাদকে উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা যার নং ২৫/২২ দায়ের হয়। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোল্লা সেলিমুজ্জামান ফাহাদের পরিবারকে জানান, তার স্কুলের কয়েকজন সহপাঠী পরিকল্পিত ভাবে ফাহাদকে খুন করে রেল লাইনে ফেলে রাখে। মৃত্যুর কয়েকদিন পূর্বে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার মায়ের নিকট ফোন করে ফাহাদকে সাবধানে চলাফেরা করার জন্য সতর্ক করেন। ফাহাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিডিআর সূত্র ধরে তদন্ত কর্মকর্তা এসব তথ্য প্রকাশ করেন বলে ফাহাদের পিতা শ্রীমঙ্গল দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান।
বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে শহরের টি ভ্যালী রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে ফাহাদের পিতা জানান, শ্রীমঙ্গল জিআরপি থানায় দায়েরকৃত অপমৃত্যু মামলার পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোল্লা সেলিমুজ্জামান মোবাইল কল লিস্ট (সিডিআর) রির্পোট আসার পর তাদের ডেকে নিয়ে জানান, সিডিআর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে তিনি নিশ্চিত হন ফাহাদকে তার সহপাঠী মুন্না, টিআরজি মাহিন, রাব্বি,ডিজে ইরফান, ফুয়াদ, মান্না, মুরাদ, তানভীর, শাহরুখ, তানজিল, ইফতি, আরাফাত,সুমন, জুম্মন, জাহিদ ডন, সহ আরো কয়েকজন মিলে হত্যা করে। শহরের সোনা মিয়া রোড লুৎফা এলাহী কমপ্লেক্সে (এহসান করিম মঞ্জিল) খুনিরা একত্র হয়ে মাস্টার প্লান করে ফাহাদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট আসার পর অপমৃত্যু মামলাকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করে সব আসামীদের ধরে প্রকৃত রহস্য উৎঘাটন করা হবে’ বলে এসআই মোল্লা সেলিমুজ্জামান তাদের জানান।
কিন্ত পোস্ট মোর্টেম রিপোর্ট হাতে আসার পর রেলওয়ে থানার ওসি সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারী ও তদন্ত কর্মকর্তা ট্রেনের আঘাতে ফাহাদের মৃত্যু হয়েছে বলে অপমৃত্যু মামলার ফাইনাল প্রতিবেদন দেবেন বলে জানান। এনিয়ে ফাহাদের মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। যদিও পোস্ট মোর্টেম রিপোর্টে মাথায় আঘাত জনিত ও মস্তিষ্কে রক্ত জমাটের কারনে মৃত্যু হয়। এছাড়া কপালে দুটি ও পায়ের নিচে আঘাতের উল্লেখ রয়েছে।
ফাহাদের পিতার অভিযোগ- সিডিআর রিপোর্টের পর এ হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে তদন্ত কর্মকর্তা ও রেলওয়ে থানার ওসি সন্দেহভাজন আসামীদের সাথে যোগসাজস করে আর্থিক লেনদেন করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, তদন্ত কর্মকর্তা এসব সিডিআর সংগ্রহের জন্য তাদেও নিকট থেকে ২২ হাজার টাকা গ্রহন করেন। তারপরও অজ্ঞাত কারণে ফাহাদ হত্যাকান্ডকে অপমৃত্যু হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। মামলার তদন্ত ভিন্ন খতে নেয়ার কারণে ফাহাদের পিতা তদন্ত কর্মকর্তা ও ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং তাদের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে মামলার তদন্তভার পিবিআই, সিআইডি বা র্যাবের মতো সংস্থার কাছে হস্তান্তরের দাবী জানান।
ফাহাদ স্থানীয় শাহ মোস্তফা ইসলামিয়া হাইস্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল। মৃত্যুর দিন ছিল তার প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা । কিন্তু ওই দিন ১২ অক্টোবর ভোর রাতে তাদের অজ্ঞাতে কে বা কাহারা তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এসব বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশের নিকট অকাট্য প্রমাণ সরবরাহ করার পরও তারা তদন্তের নামে সময় ক্ষেপন ও মামলার আলামত নষ্ট করে আসামীদের বাঁচানোর পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ করেন।
তিনি তার সন্তান হত্যার রহস্য উৎঘাটন করে খুনিদের গ্রেফতার ও বিচার দাবী করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোল্লা সেলিমুজ্জামানকে ফোন দেয়া হলে তিনি, আসামীদের নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে মামলার তদন্ত চলছে বলে লাইন কেটে দেন।
রেলওয়ে থানার ওসি সাফিউল ইসলাম পাটোয়ারীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে এসআই সাব্বির নামে এক কর্মকর্তা জানান, তিনি (ওসি) অভিযানে রয়েছেন।
ফাহাদ মৃত্যুর তদন্তে পুলিশ কর্মকর্তার অনিয়ম ও অনাস্থার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেলওয়ে’র ডিআইজি জয়দেব ভদ্র বলেন, বিষয়টির খোঁজ নিয়ে সিলেট জোনের এসপিকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ফাহাদের ছোট ভাই ফারদিন রহমান, মো. সালমান ছোট বোন নুসরাত জাহান জেনিফা, চাচা ইমাদ আলী ও মুছাব্বির আল মাসুদ উপস্থিত ছিলেন।