বিশেষ প্রতিবেদক :
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি ইউনিয়নের বিট অফিসার এস.আই রাকিব, ও সহকারী বিট অফিসার এ.এস. আই তানভীরের তত্বাবধানে চলছে বেপরোয়া চোরাচালান বানিজ্য।
অনুসন্ধানে জানাজায় বিছনাকান্দি সীমান্তে ভারতীয় অবৈধ গরু ও মহিষের লাইনের মূল হোতা, চাঁদাবাজ গোলাম হোসেন তিনি প্রতি গরু ও মহিষ থেকে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের নামে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছেন, আর তার এই অনৈতিক কাজের শেল্টার দাতা হচ্ছেন গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের রুস্তমপুর বিছনাকান্দি বিটের বিট অফিসার এস.আই রাকিব ও এ.এস.আই তানভীর, শুধু গরু, মহিষ নয় অবৈধ ভারতীয় এমন কোন পণ্য নেই যা থেকে নিয়মিত চাঁদাবাজি করছেন না এস.আই রাকিব ও গোলাম হোসেন সিন্ডিকেট।
অনুসন্ধানী টিম পরিচয় গোপন রেখে এলাকার সাধারণ জনতার সাথে মিশে চোরাচালান ব্যবসায়ীদের ব্যবসার রহস্য উন্মোচন কালে তাদের কাছে জানতে চাইলে এলাকার সচেতন মহলের লোকজন ও একাধিক চোরাকারবারী জানান গোলাম হোসেন ও তার বাহিনীর সদস্যরা হুমকির মধ্যে বুঙ্গার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গরু প্রতি ২ হাজার ও মহিষ প্রতি ৩ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে। তাছাড়া চিনি, কিট,পাথর, বালু সবকিছুতেই তাদের চাঁদা দিয়ে অবৈধ কে বৈধ করে নিতে হয়। কেউ চাঁদা না দিলে তাদের সিন্ডিকেট এস.আই রাকিব কে দিয়ে ভারতীয় অবৈধ পণ্য অনুপ্রবেশের দায়ে তা ধরিয়ে দেয়।
গোলাম হোসেন ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে চোরাচালানের গডফাদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবং পতিত শেখ হাসিনা সরকারের বৈদেশিক ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী এমরান আহমেদের কাছের লোক বলে নিজের দাপট খাটিয়ে বিছনাকান্দি, রুস্তমপুর এলাকায় নিজের প্রভাব বিস্তার করে চলতেন। তার ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলতে নারাজ ছিল, স্বৈরাচারের পতন হলেও থেমে নেই গোলাম হোসেনের রাজত্ব। এখনও তাঁর ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হন না। উল্লেখ্য এই গোলাম হোসেনের বাড়িতে একাধিক বার টাস্ক ফোর্সের অভিযান পরিচালিত হয়েছে, এবং সে সব অভিযানে অবৈধ ভারতীয় গরু, মহিষ ও জব্দ করা হয়েছে।
সে সময় গোলাম হোসেন পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আটক করা সম্ভব হয় নি। পরবর্তীতে গোলাম হোসেনের নামে টাস্কফোর্স মামলা ও করে। এতকিছুর পরও গোয়াইনঘাটে এখনও আওয়ামী সরকারের দোসররা দাপটের সঙ্গে চোরাচালান ব্যাবসা ও চাঁদাবাজির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। আর ফ্যাসিবাদের দোসরদের রক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করছেন এস.আই রাকিব ও এ.এস.আই তানভীর, তাদের অপ্রতিরোধ্য কার্যক্রমে গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি সীমান্ত এখন চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। চোরাচালান বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের পদস্থকর্মকর্তারা দফায়-দফায় মিটিংয়ে বসছেন। তবুও চোরাকারবারিদের লাগাম টানা যাচ্ছেনা।
সীমান্ত এলাকার চোরাচারালান বন্ধ করতে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি, সিলেট এসএমপি কমিশনার, চোরাচালান বিরোধী ট্রাক্সফোর্স, চোরাচালান মনিটরিংসেল প্রতিমাসে করছেন একাধিক সভা তবে দিন শেষে ফলাফল সেই শূন্যই।
সূত্র বলছে পদস্থ কর্মকর্তা চোরাচালান বন্ধে তৎপর হলেও তাদের অধিনস্থ ওসি-এস.আই রা জড়িয়ে পড়ছেন চোরাকারবারীদের সাথে।
চোরাকারবারিদের সাথে রয়েছে তাদের গভীর সখ্যতা। কাঁচা টাকার লোভে তারা একেক এলাকায় নিয়োগ দিচ্ছেন একেক লাইনম্যান, দরকষাকষির মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতা পাচ্ছেন লাইনম্যানের দায়িত্ব।
সীমান্ত এলাকার থানার ওসিরা দিনে ডিআইজি, কমিশনার, এসপির মিটিংয়ে অংশ নিলেও রাতে থানায় ঠিকই বসেন চোরাচালানের লাইনম্যানদের নিয়ে। এসব মিটিং হলে থানার ওসিরা ঘুষের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ পান।
দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, এস.আই রাকিব ও এ. এস.আই তানভীর এতোটা বেপরোয়া যে তারা অনেক সময় গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি’র ) নির্দেশ ও অমান্য করে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের চাঁদাবাজি। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে তারা ওসির নির্দেশের ও তোয়াক্কা না করার কারণ হলো তাদের নাকি গোয়াইনঘাট কোম্পানিগঞ্জের সার্কেল এ এস পি সাইদুর রহমানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় চোরাই পণ্য দিনে রাতে প্রকাশ্যে প্রবেশ করছে। আর রাত গভীর হলেই সিলেট শহর ও সিলেট হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সে সব পন্য আবার সারাদেশে পাঠানো হচ্ছে কখনো কাভার্ড ভ্যান,বালু ভর্তি ট্রাক অথবা পাথর উপরে দিয়ে।
ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা এসব পণ্য স্থানীয় ভাবে ‘বুঙ্গার মাল’ নামে পরিচিত। এই ‘বুঙ্গার মালে’ সয়লাব এখন সিলেটের বিভিন্ন বাজার। কিন্তু সাধারণ ক্রেতাদের কাছে দাম আকাশচুম্বি ও ক্রেতাদের নাগালের বাহিরে। সীমান্ত দিয়ে যে সবল চোরাইপণ্যে দেশে আসে সেগুলোর মধ্যে টিনি, কসমেটিক্স-কিট, মাদক, শাড়ী, থ্রিপিছ, আপেল, কম্বল, গাড়ির যন্ত্রাংশ, গরু,মহিষসহ বিভিন্ন পণ্য।
চোরাকারবারির ভাষ্যমতে, আগে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার চিনি আসত। বর্তমানে বিজিবির নিয়মিত অভিযানের কারণে কম আসছে। মহাসড়ক দিয়ে এখন প্রতি ট্রাক চিনি ৫ থেকে ৮ হাজার টাকায় পার করিয়ে দিচ্ছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। একই ভাবে অন্যান্য পণ্যের প্রকার অনুযায়ী ট্রাক প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয় এই সিন্ডিকেটকে। গত ৩০শে মার্চ এস এম পি’র বিমানবন্দর থানা পুলিশের হাতে তিনটি ট্রাকে মোট ৪৬৭ বস্তা শুল্কফাঁকি দিয়ে আনা ভারতীয় চিনি আটক হয়, আর এই তিন গাড়ি চিনি এসেছে গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি ইউনিয়ন থেকে, তাছাড়া প্রায় প্রতিদিন রাতেই হাদারপার বাজারের দক্ষিন উত্তর পাশে শামীম মিয়ার পাথর ভাঙ্গার মিলে অবৈধ ভারতীয় চিনি এনে জমাকরেন মিল মালিক শামীম মিয়া সহ অন্যান চোরাকারবারিরা, পরবর্তীতে এস.আই রাকিবের গ্রিন সিগন্যাল পেলে তা সিলেটের উদ্দেশ্যে ছাড়া হয়।
গত ৫ই আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থান দেশের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন নিয়েছে।
কিন্তু সিলেটের চোরাচালান এবং পাথর-বালু লুট বন্ধ হয়নি। এজন্য পুলিশের নিস্ক্রিয়তার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন করে বদলি হয়ে আসা পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার কথা বলা হচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে গোলাম হোসেনের ব্যাবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে গোলাম হোসেন বলেন যা শুনেছেন ভালো, আমি বুঙ্গার ব্যাবসা করি গত ৫ ই আগষ্টের আগে করতাম এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় এজন্য বন্ধ, এসব কোনো কিছু চলেনা যারা বলেছে এসব মিথ্যা কথা বলছে। এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
সীমান্ত চোরাচালান ও এসব অভিযোগের বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন সীমান্ত চোরাচালান ঠেকানো পুলিশের কাজ নয়। উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে দেদারসে ভারতীয় পণ্য এবং মাদক ঢুকছে স্বীকার করে তিনি বলেন- জরুরি হয়ে গেছে ওই এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ।
তিনি বলেন- চোরাচালান পরিবহন বন্ধে সড়কে পুলিশ যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে। আর কোন পুলিশ সদস্য যদি কোন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন তাহলে তর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে ।
কোয়ারি থেকে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকার কারণে অনেকে চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে বলে স্বীকার করেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন- গোটা জেলায় প্রায় সব পুলিশ নতুন। এসপি অফিসে খাতাপত্রও নতুন।
এ অবস্থায় কাজ বুঝে নবাগত পুলিশ সদস্যরা অল্পদিনের মধ্যেই অপরাধ বন্ধে তৎপর বলে দাবি করেন তিনি। চোরাচালান বিষয়ে এসপি’র মূল্যায়ন হচ্ছে একটি চক্র বংশপরম্পরায় সীমান্তে এ অপরাধ অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অপরাধ বা পাপবোধ নেই।
এবিষয়ে জানতে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানিগঞ্জের সার্কেল এ এস পি সাইদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
এবিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) সরকার তোফায়েল আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি, অন্য কোন পুলিশ কর্মকর্তা ফোন রিসিভ করেন,তখন উনার কাছে ওসি তোফায়েল আহমেদ কোথায় জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন আপনার পরিচয় কি? পরিচয় নিশ্চিত করার পর তিনি কিছু না বলেই ফোন কেটে দেন, পরবর্তীতে একাধিকবার কল দিলেও আর কেউ ফোন রিসিভ করেন নি।
এসব বিষয়ে জানতে গোয়াইনঘাট থানার রুস্তমপুর- বিছনাকান্দি ইউনিয়নের বিট অফিসার এস আই রাকিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এবিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না, থানার অভিভাবক হচ্ছেন ওসি স্যার, আপনি উনার বক্তব্য নেন।
এবিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার এ এস আই তানভীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন গোলাম হোসেন ও আমাদের নিয়ে কিছু লোকজন অপপ্রচার চালাচ্ছে, আপনারা একটু যাচাই করে দেখবেন।