নিজস্ব প্রতিবেদক ::
সিলেটের গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল বাজার এখন ভারতীয় চোরাই গরুর নিরাপদ স্থান। এখানে শুধু ভারতীয় চোরাই গরু নয় দেশী চুরি হওয়া গরুরও বৈধতা দেওয়া হয়।
এই বৈধতার রশিদ দিয়ে দৈনিক লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন চাচা-ভাতিজার সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় তোয়াকুল ইউনিয়নের বিএনপি-যুবদল ও কৃষকদলের নেতারা।
এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান আহমদ এবং এক সাংবাদিক নেতা। ফলে রহস্যজনক কারণে উপজেলা প্রশাসন ও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি-সোনারহাট ও দমদমা সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় চোরাই গরু এক সময় হাদারপার বাজারের রাখা হতো। পরে চোরাচালানকারীদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়।
এরপর থেকে হাদারপার বাজার থেকে অন্যত্র গরু সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা শুরু করেন চোরাই ব্যবসায়ীরা। তখনই তোয়াকুল বাজারের ইজারাদার চাচা-ভাতিজা সিন্ডিকেটের সদস্যরা চোরাচালানকারীদের ম্যানেজ করেন এবং অবৈধ গরুর বৈধ করার রশিদ প্রদান করেন। তাদের রশিদ নিয়েই গোয়াইনঘাট থেকে দৈনিক শত শত গাড়ী গরু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা লোকমানের মাধ্যমে ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল উদ্দিন তাদের সরকারের আমলে তোয়াকুল বাজার পশুর হাটের ইজারা বাগিয়ে নেন। কিন্তু তাদের সরকারের আমলে ভারতীয় গরু থেকে সুবিধা নিতে না পারলেও বর্তমানে বিএনপি নেতাদের ম্যানেজ করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
একাধিক গরুর মালিকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ইজারাকৃত রশিদের মাধ্যমে প্রতিটি গরু কিংবা মহিষ বাবত পাঁচশত টাকা লিখা থাকলেও অলিখিতভাবে পশুর ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতিটি গরু-মহিষ ছোট-বড় আকার ভেদে ১ হাজার থেকে ১৫’শ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
আর রাস্তায় পুলিশি ঝামেলায় পড়বেনা এই কথা বলে রুহুল আমিন পুলিশের নামে গাড়ি প্রতি ১৫’শ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। সেই টাকা সাংবাদিক নেতা ও বিএনপি নেতাদের বন্টন করা হয়।
তবে ইজারাদার বিল্লাল উদ্দিনের দাবি বৈধ-অবৈধ গরু দেখার সময় নেই। গুরু বাজারে আসলেই তিনি রশিদ দিয়ে টাকা আদায় করবেন। রুহুল আমিন পুলিশের নামে যে টাকা আদায় করেন সেটি নিরাপত্তার জন্য বলে দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা আদায়য়ের বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিবেদককে চায়ের দাওয়াত দেন এবং স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতার সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ,‘‘আমি নতুন এসেছি এজন্য বিষয়টি অবগত নই। আপনি যেহেতু বলছেন আমি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই এর ব্যাবস্থা নেব ।’’
এখানে উল্লেখ্য যে বিভিন্ন গনমাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ২৫ দিন আগে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে ঠিক একই বক্তব্য গনমাধ্যমকর্মীদের প্রদান করেন গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী যে প্রায় এক মাস হলেও এই অবৈধ ভারতীয় পশু বিক্রির বিষয়ে কোন পদক্ষেপই নেননি গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী । তার এহেন কর্মকান্ডে স্থানীয় পশু বিক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ।