তুরান রানা, বটিয়াঘাটা ->>
বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের গজালিয়া এলাকায় অবস্থিত লাইসেন্সবিহীন জেবি-১ ব্রিকস ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে প্রকাশ্য দিবালোকে কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ। চারিদিকে ইট পড়ানো ধোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসি রয়েছে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। কোনভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না এই ইটভাটা চক্র সিন্ডিকেটের। বটিয়াঘাটা উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে দিনরাত ইটের ভাটায় কাঠ পড়ানোর মহোৎসব কর্মকাণ্ড। ইট পোঁড়ানো ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্রের শর্তগুলো না মেনেই চলছে বটিয়াঘাটার বেশিরভাগ ইটভাটা। খজখবর নিয়ে যানা যায়,লাইসেন্স বিহীন উক্ত ইটভাটার মালিক শারমীনা পারভীন রুমা। ডুমুরিয়া উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনি। ক্ষমতা আর টাকার দাপটে দিশেহারা হয়ে গেছেন তিনি।
এসব ইটভাটাগুলোতে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়া বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরে প্রশাসনের অভিযান নেই। ফলে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ভাটা পরিচালনা করতে দেখা গেছে এই সব দুর্নীতি পরায়ন মালিকদের।
ইতোপূর্বে এলাকাবাসি কর্তৃক বহুবার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও,তাতে কোনো কাজ হয়নি বলে জানান তারা।
উক্ত ইটভাটার মালিক,সরকারি কোন আইন না মেনে অজ্ঞাত কারনে নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ইটভাটার ব্যবসা বাণিজ্য। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভুকছে ইটভাটার পার্শ্ববর্তী প্রায় ৫/৭টি গ্রামবাসি। প্রতিনিয়ত কোন না কোন রোগ বালাই লেগেই থাকছে অধিকাংশ পরিবারে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধান,শরিষা,চলতি মৌসুমে লাগানো তরমুজ, ঘেরের ও পুকুরের মাছ সহ খাবার বিভিন্ন সবজি। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ছেয়ে যাচ্ছে গোটা এলাকা। রাস্তাদিয়ে হাটা চলা যাচ্ছে না। এমনকি বাড়িতে বসবাস করা অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সর্বক্ষণিক ধোয়ার দুর্গন্ধ লেগেই থাকে। রাস্তা দিয়ে হাটতে গেলে পথচারীদের নাকে মুখে কাপড় বেঁধে চলাফেরা করতে হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে গ্রামের অধিকাংশ বয়স্কদের। বটিয়াঘাটা উপজেলার পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয়া,পাইকগাছায়, রুপসা, ফুলতলা সহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিনিয়ত অবৈধ ইটভাটার অভিযান চললেও বটিয়াঘাটায় তার চিত্র ভিন্ন রূপ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে একাধিক ভাটার ইট পোড়ানোর লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বেশিরভাগ ভাটা মালিকরা নবায়নের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন।
এছাড়া অধিকাংশ ভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্রের মেয়াদও শেষ হয়েছে। অনেক ভাটার লাইসেন্সি নেই। তার ভিতর জমার্দার ভাটা (জেবি)’র নেই কোন বৈধতা কাগজপত্র।
ইটভাটা আইনে স্পষ্ট উল্লেখ করা রয়েছে,জালানি কাঠ দিয়ে ইটভাটায় ইট পোড়ানো যাবেনা। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,কয়লা তো দুরের কথা! বিভিন্ন জাতের জালানি কাঠ দিয়ে ইটভাটায় পুড়ানো হচ্ছে।
গজালিয়া এলাকার মোক্তার শেখ,ভাটার পাশেই বসবাস করেন তানি। তিনি বলেন,পরিবার পরিজন নিয়ে এলাকায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এলাকার হামিদুর রহমান মোল্যা বলেন, ইটভাটা চারিদিকে ৮/১০টি গ্রাম। এখানে প্রায় ২০ হাজার লোকজনের বসবাস। এলাকার অধিকাংশ লোকই রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। একাধিক বার বলেছি ইটভাটা মালিককে। কোন কাজ হয়না তাতে।
আব্দুর রহমান নামে এক ভুক্তভোগী বলেন,ধোয়ার দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করা যায় না। এমনকি রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রামের যে রাস্তাটি রয়েছে সেটি ইটের ট্রাক,গাড়ি যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
ইটভাটার ম্যানেজার ইকরাম হোসেন বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে মাসোয়ারা দিয়ে থাকি। বাকি কথা আমাদের মালিকের সাথে যোগাযোগ করুন। যারা ভাটায় আসে তারা সবাই তার সাথে যোগাযোগ করে থাকেন।
মালিক শারমীনা পারভীন রুমা বলেন,আবেদন করেছি। এখন নিবন্ধন পাইনি। নিবন্ধন ছাড়া কি ভাবে ইটভাটা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন,সবাই যে ভাবে চালাচ্ছে,আমিও সেই ভাবে চালাচ্ছি। আপনি আমার সাথে অফিসে এসে দেখা করেন।
বটিয়াঘাটা ভূমিহীন সংগঠন ও নিজেরা করি ইতোপূর্বে উক্ত অবৈধ ইটভাটা বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। তারই পরিপেক্ষিতে তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান উক্ত ইটভাটা মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
বটিয়াঘাটা নির্বাহী অফিসার মোঃ মমিনুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্ত পুর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
খুলনা বিভাগীয় অফিসের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ আবু সাঈদ বলেন,আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। এ বিষয় বিস্তারিত বলতে পারবনা। তবে জমাদ্দার ব্রিকস এর কোন লাইসেন্স বা ছাড়পত্র নেই। এদের বিরুদ্ধে অতিসত্বর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।