ডেস্ক রিপোর্টঃঃ
সিলেটের জৈন্তাপুরে কনকনে শীতের রাতে মানসিক বিকারগ্রস্ত (পাগলি) এক নারী ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। গত বুধবার (১লা জানুয়ারি) কনকনে সন্ধ্যায় উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের শুক্রবারী বাজারে এই ঘটনা ঘটে।
এদিকে নবজাতক শিশু কন্যা সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্নের। জন্ম দিয়েছে নানান আলোচনার।
জানা যায়, মাস দুএক ধরে ওই মানসীক ভারসাম্যহীন মহিলাকে শুক্রবারী বাজার এলাকায় উদ্দেশ্যহীনভাবে চলাফেরা করতে দেখা যায়। এর আগে তাকে ওই এলাকায় কেউ দেখেনি না বা তার পরিচয় ওই এলাকার কেউ জানেন না।
ইংরেজি বছরের প্রথম দিন সন্ধ্যায় হঠাৎ শুক্রবারী বাজারের ব্যবসায়ীরা পাগলির প্রসব ব্যথার চিৎকার শুনে এগিয়ে আসেন।
তৎক্ষণাৎ উপস্থিত সকলের প্রচেষ্টায় কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও কামরুজ্জামান চৌধুরী ও এলাকার মুরুব্বিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হয়ে পাগলী মা ও নবজাতক সন্তানের যত্ন ও লালন পালনের ব্যবস্থা করেন।
এদিকে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর সন্তান প্রসবের খবর পেয়ে রাতেই চিকনাগুল এলাকায় মা ও সদ্য ভুমিষ্ঠ ফুটফুটে নিষ্পাপ কন্যাশিশুটি দেখতে ও খোঁজ খবর নিতে ছুটে যান জৈন্তাপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া।
এসময় তিনি পিতৃ পরিচয়হীন নবজাতককে কোলে তুলে নেন। এবং তার পক্ষ থেকে বাচ্চাটির সঠিক যত্ন চিকিৎসা ও প্রসুতি মায়ের চিকিৎসাসহ বাচ্চাটি লালন পালনে সকল ধরনের সহযোগিতার ঘোষণা দেন।
পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য পাগলি মা ও নবজাতক শিশু কন্যাকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে মা ও নবজাতক কন্যা সন্তান ভালো আছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁদের স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।
অনেকেই চাচ্ছেন কন্যাসন্তাকে দত্তক নিতে কিন্তু আইনী প্রক্রিয়া অনুসরন করে কেউ যদি নিতে চায় তাহলে সন্তানটিকে দত্তক দেয়া হবে। পাগলীর পরিবার খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শুক্রবারী বাজারের আলী আহমদ বলেন, ঘটনাটি বেদনাদায়ক এবং একই সাথে লজ্জাজনক। এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, ঘটনার বিবরণ শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি।
এই ঘটনা মর্মাহত হয়েছি এবং পাগলির নবজাতক সন্তানের পিতৃপরিচয় খুঁজে বের করতে পুলিশ প্রশাসনকে নিদর্শনা প্রদান করা হয়েছে।
তাছাড়া তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছে। অনেকেই বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে চাচ্ছেন।
আমরা ওই নারীর পরিবারের খোঁজ করছি যদি পাই তাহলে তাদের হাতে তুলে দিব।
পাগলী মা ও তার সন্তানের সর্বশেষ কোনও একটা ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত মা ও মেয়ে প্রশাসনের অধীনে থাকবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া।
এদিকে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী ও নবজাতক সন্তানের চিকিৎসা, তাৎক্ষণিক দেখতে যাওয়া এবং সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখায় প্রশংসা কুঁড়াচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া।