জাফলং থেকে ঘুরে এসে, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় তিন খলিফার রামরাজত্বে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে চোরাচালান বাণিজ্য, চলছে চোরাচালানের মহোৎসব।
সিলেটের পুলিশ সুপারসহ উর্ধতন কর্তাব্যক্তিদের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে চালানো হচ্ছে চোরাকারবারিদের রমরমা চোরাচালান বাণিজ্য ।
আর এই রামরাজত্বের নেপথ্যে কাজ করছেন তিন খলিফা তারা হচ্ছেন গোয়াইনঘাট থানার এবং জাফলংয়ের বিট অফিসার এসআই জহুর লাল দত্ত, লাইনম্যান সামছুল ইসলাম, ওরফে ( কালা সামছু ), এবং লাইনম্যান জাফলং এর মান্নান মেম্বার।
তাদের দৌরাত্বের কাছে অসহায় স্থানীয় প্রশাসন,ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন।
অনুসন্ধানে জানাযায় বিগত ০৫ই আগষ্টের পর থেকে এই বিতর্কিত এসআই জহুর লাল দত্ত,ও চোরাকারবারীদের নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রচারিত হবার পরও নূন্যতম কোন আইনি পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে জাফলং সীমান্তে এই তিন খলিফার রামরাজত্বের কাছে সম্পূর্ণ অসহায় স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা।
বিগত ছাত্রজনতার জুলাই-আগস্টের গনঅভ্যুথানের পর স্বৈরশাষক শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলেও ,তাদের প্রেতাত্মারা এখনো রয়ে গেছে,
জুলাই-আগস্টের গনঅভ্যুথানের পর ভারতের সাথে সব ধরণের জনযোগাযোগ বন্ধ থাকলেও বন্ধ হচ্ছে না সিলেটের জাফলং সীমান্তের চোরাচালান রুট।
গত জুলাই আগস্টের পর স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের কিছু নেতা কর্মীরা পর্দার আড়ালে চলে গেল ও তাদের দোসরদের দিয়ে, বালু পাথর হরিলুট ও সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাকারবারিদের নিয়ে রামরাজত্ব গড়ে তুলেছেন জাফলংয়ের বিট অফিসার এসআই জহুর লাল দত্ত, লাইনম্যান সামছুল ইসলাম, ওরফে ( কালা সামছু ), এবং লাইনম্যান জাফলং এর মান্নান মেম্বার। ।
বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে যেমন চলছিল, ঠিক তেমনি এখন ও বহাল আছে। তাদের পিছনে অদৃশ্য শক্তির উৎস হিসেবে যোগান দিচ্ছে গোয়াইনঘাট থানার জাফলংয়ের বিট অফিসার এস আই জহুর লাল দত্ত।
প্রত্যহ হাজার হাজার বস্তা রসুন চালান হচ্ছে ভারতে। বিনিময়ে চোরাই পথে আমদামী হচ্ছে ‘মিটাবালু’ নামে পরিচিত লাখো বস্তা ভারতীয় চিনি, মদ, ফেনসিডিল, কসমেটিক্স, মসলাজাতীয় দ্রব্যাদি ও ভারতীয় পাতার বিড়ি।
চায়না রসুন ছাড়াও এসব পণ্যের বিনিময়ে পাচার করা হয় বৈদেশিক মূদ্রা পাউন্ড ডলার ও রুপি।
সামছুল ইসলাম, ওরফে ( কালা সামছুর ) তত্বাবধানে জাফলং ও তামাবিল সীমান্তে রেস্টুরেন্ট ও দোকান ব্যবসার আড়ালে গড়ে ওঠেছে কয়েকটি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ। এসব দোকান থেকেও সামচু নিয়মিত বখরা আদায় করে থাকেন।
বস্তাজাত প্রতিটি চোরাই পণ্যে বস্তা প্রতি ১ হাজার এবং কোনো দামীপণ্য যেমন কসমেটিকস, মোটর বাইকের যন্ত্রাংশ ,স্কুটি, ইত্যাদি দামী চোরাই পণ্য থেকে সামছু আদায় করে থাকেন বড় অঙ্কের টাকা।
সিলেটের এসপি, জেলা ডিবি পুলিশ ও থানার ওসির নামে এসব বখরা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ প্রকাশ।
দিনভর বখরা আদায় করে রাত ১০-১১ টায় জাফলং মামার দোকান বাজারস্থ এসআই জহুর লাল দত্তের অফিসে অথবা সামছুল ইসলাম, ওরফে ( কালা সামছুর ) পাথর ক্রাশার মিলে এসব টাকার ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়ে থাকে।
এ ভাগ-বাটোয়ারায় গোয়াইনঘাট এলাকার সাংবাদিক নামধারী একাধিক ব্যক্তি ও সিলেটের কথিত তিন সাংবাদিক নামধারী ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন বলে অনুসন্ধানে জানাযায় ।
এদিকে জাফলং জিরো পয়েন্ট সিঁড়ির ঘাট, সাইনবোর্ড , লাল মাটি, আমতলাসহ সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশ দেদারসে আসছে ভারতীয় অবৈধ পণ্য সামগ্রী ,
ভারতীয় চোরাকারবারিদের কাছ থেকে জেলা ডিবি ও থানা পুলিশের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে লাইনম্যান মান্নান মেম্বার সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে।
জেলা ডিবির লাইনম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে জড়িত রয়েছেন, মান্নান মেম্বার তিনি নিজেই চোরাচালান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ,
সীমান্তবর্তী এলাকায় পর্যটন কেন্দ্রে রয়েছে মান্নান মেম্বারের নিজস্ব দোকান, ভারতীয় অবৈধ পণ্য সামগ্রী এনে দোকানে কিছু রেখে বাকি সব ভারতীয় পণ্য গোডাউন বুঝাই করে রাখেন মান্নান মেম্বার যাতে কেউ বুঝতে না পারে।
জাফলং সীমান্তে মান্নান মেম্বার এর নিয়ন্ত্রণে চলে ভারতীয় চোরাচালান ব্যবসা, জেলা ডিবি ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব পালন করছেন মান্নান মেম্বার,
মান্নান মেম্বারের বাড়ি সীমান্তবর্তী এলাকার জাফলং গুচ্ছ গ্ৰামে, সীমান্তের কাছাকাছি আছেন বলে, নিজ দায়িত্বে, সবকিছু দেখভাল করছেন,
মান্নান মেম্বার পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যও বটে, মান্নান মেম্বার তার দুই ভাতিজা, রিয়াজুল ও সিরাজুল কে দিয়ে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে ও সাইনবোর্ড, লাল মাটি, আম তলা, ও সোনা টিলা, তামাবিল স্থলবন্দর সহ বিভিন্ন পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণ করছেন,
স্থানীয়সূত্রে জানাযায় এলাকায় রয়েছে মান্নান মেম্বার এর বিশাল এক বাহিনী যার ফলে তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলে কথা বলতে পারে না,
দিনের বেলা ছোট ছোট শিশু ও মহিলাদের দিয়ে, ভারত থেকে ভারতীয় মদ, ফেনসিডিল, ও চিনি, কম্বল, সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মালামাল আনতে ব্যস্ত সময় পার করেন মান্নান মেম্বার।
বিভিন্ন স্থানে বলে থাকেন এলাকায় কোনো কাজ কাম নাই, কর্মসংস্থান না থাকায়, মানুষ এসব করছে। এসব কথা শুনে অনুসন্ধানে যান সংবাদ কর্মীরা এলাকায় ঘুরে জানতে পারেন। সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় চোরাচালান ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশির ভাগ, অন্য এলাকা থেকে এসে ভাড়া থেকে, দীর্ঘদিন থেকেই চোরাচালানে সাথে জড়িয়ে পড়ে, জাফলং সীমান্ত এলাকা দিয়ে ৩ থেকে ৪ মিনিটের মধ্যে ভারতে প্রবেশ করা যায়।
সুযোগ সুবিধা ভাল, সীমান্ত এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র হবার সুবাদে সেখানে রয়েছে ব্যবসায়ীদের দোকান, প্রতিটি দোকানে দোকানে ভারতীয় অবৈধ পণ্য সামগ্রী দিয়ে সয়লাব।
সীমান্ত এলাকায় রাত হলে শুরু হয়, কোটি কোটি টাকার ভারতীয় অবৈধ পণ্য সামগ্রী বাংলাদেশ প্রবেশ করানোর প্রতিযোগীতা, সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় চিনি, চা পাতা, কীট, কসমেটিক, মদ , ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্ট মোবাইল ফোন এর কার্টুন সহ বিভিন্ন জিনিষপত্র বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে নিরাপদে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে,
চোরাচালানের সাথে জড়িত একাধিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা আরো জানান যে এসব মান্নান মেম্বার ম্যানেজ করে, আমরা মান্নান মেম্বার কে লাইনের টাকা দেই।
জেলা ডিবি ও থানা পুলিশের নামে লাইনম্যান হিসেবে মান্নান মেম্বার তার দুই ভাতিজা কে দিয়ে চাঁদার টাকা আদায় করেন।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে এ প্রতিবেদকের কথা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমানের সাথে , তিনি জানান ঊর্ধ্বতন সদরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি’র নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত লক্ষ লক্ষ টাকার চোরাচালানের মালামাল জব্দ করছি।
এব্যাপারে সিলেট জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) আলী আশরাফ এর মুঠো ফোনে কল দিলে ফোন রিসিভ করে তিনি বলেন, মান্নান মেম্বার নামের কোন ব্যক্তি কে আমি চিনি না, আমি এর বেশি কিছু বলতে পারবনা একথা বলেই ফোন কেটে দেন।
এব্যাপারে জানতে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদের মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমি অবগত নই,তারপরও আপনি যেহেতু বলছেন বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।
উক্ত অভিযোগর বিষয়ে জানতে গোয়াইনঘাট থানার জাফলংয়ের বিট অফিসার এস আই জহুর লাল দত্তের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি ।
এব্যাপারে জানতে চোরাকারবারী ও লাইনম্যান খ্যাত সামছুল ইসলাম, ওরফে ( কালা সামছুর ) সাথে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের বিষয় স্বীকার করে বলেন ভাই আমি অতীতে ও বর্তমানে এসব বিষয়ে জড়িত ছিলাম কিন্তু বিগত সপ্তাহ খানেক আগে এসব ছেড়ে দিয়েছি । যা আমি জাফলংয়ের বিট অফিসার এস আই জহুর লাল দত্তকে ও জানিয়েছি ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মান্নান মেম্বারের সাথে তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এরকম হাজারো সাংবাদিক আমাকে ফোন দিয়ে হাজার হাজার নিউজ করছে আমার তাতে কিছু যায় আসে না ,আপনিও নিউজ করে আমার যাই পারেন তাই করেন কোন সমস্যা নাই বলে একথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
—{ চলমান }—