শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব নির্বাচন তফসিল বাতিল চেয়ে আবেদন খারিজ

 

বিশেষ  প্রতিনিধি আবুজার বাবলা :
প্রেসক্লাব নির্বাচনে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগে তফশীল বাতিল চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন।
গত ৭ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তরের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি সৈয়দ আবু জাফর সালাউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এই অভিযোগ করেন।
সৈয়দ সালাউদ্দিন তার অভিযোগে বলেন,
গত ১ লা জানুয়ারী সমাজ সেবা অফিসার ও মো. সোয়েব হোসেন চৌধুরী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রেসক্লাবের নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী ৫ জানুয়ারী মনোয়ন ফরম সংগ্রহ, ৬ জানুয়ারী মনোনয়ন ফরম জমাদান ও যাচাই-বাছাই, ৭ জানুয়ারী প্রত্যাহার, ৮ জানুয়ারী চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও আগামী ১৫ জানুয়ারী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।
সৈয়দ সালাউদ্দিন জানান, ‘৫ জানুয়ারী তিনি সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকালে ২৭ জন ভোটার তালিকায় ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলীর নাম দেখতে পাই’। তিনি উল্লেখ করেন- ‘২০২০ সালে মো. ইদ্রিস আলীকে সর্বসম্মতিক্রমে আজীবন বহিষ্ককার (ক্লাব থেকে) করেছিলেন। গত ২৭ অক্টোবর ক্লাবের কার্যকরী পরিষদের এক সভায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল ফজল ডন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত রবিন অগঠনতান্ত্রিক ভাবে ইদ্রিস আলীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন। সভায় ৪ জন সদস্য এর বিরোধীতা করে সাধারণ সভায় তা পাস করাতে দাবী জানাই। কিন্তু পরবর্তিতে গায়ের জোরে ইদ্রিস আলীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত পাস করা করা হয়। বিষয়টি ২৬ ডিসেম্বর তারিখের সাধারণ সভায় আলোচনা করা হয়নি আবার ইদ্রিস আলীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে কার্যকরী পরিষদেও পাস করানো হয়নি। ফলে ভোটার তালিকায় তার নাম সংযুক্ত করা গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ তিন ধারা-১ (ক) পরিপন্থী’ বলে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ‘প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের আগে বহিষ্কৃত ইদ্রিস আলীর সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ-৮ এর ১৪ (১) ‘জ’ ধারা লঙ্ঘন করে ক্লাবের সাবেক সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী, সনেট দেব চৌধুরী, সুভাস দাস তপনের সদস্য পদ বাতিল, সহ-সভাপতি দিপঙ্কর অট্টাচার্য লিটন, মাহমুদ রাকিব এর সদস্য পদ স্থগিত করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের মাত্র ৬ দিনের মাথায় ১৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে’। গঠনতন্ত্র সুনির্দিষ্টভাবে লঙ্ঘন করে ঘোষিত নির্বাচনী তফশীল ও ইদ্রিস আলীর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাতিল করার দাবী জানান। এর আগে গত ৫ জানুয়ারি ক্লাবের সাবেক সহসভাপতি দিপঙ্কর ভট্টাচার্য লিটন ও সদস্য সনেট দেব চৌধুরী ভোটার তালিকায় তাদের নাম বাতিল করার আপত্তি জানিয়ে নাম তালিকাভুক্তি চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পৃথক দুটি অভিযোগ দেন।
অভিযোগ পেয়ে সোমবার (৬ জানুয়ারি) (নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দানের নির্ধারিত দিনে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন তার সভাকক্ষে উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। এতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনার মো. সুয়েব হোসেন চৌধুরী, অভিযোগকারী সৈয়দ সালাউদ্দিন, আমার দেশ পত্রিকার শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি এম ইদ্রিস আলী, ক্লাবের সভাপতি আ ফ ম আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত রবিন, ইসমাইল মাহমুদ, কাওছার ইকবাল, সৈয়দ সায়েদ, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, সাইফুল ইসলাম, আবুজার বাবলা, রুবেল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীর্ঘ সময় উভয় পক্ষের আলোচনা শুনে একে একে ৩টি অভিযোগ খারিজ করে অভিযোগ নিষ্পত্তি করেন। একই সাথে এম ইদ্রিস আলির সদস্য পদ বহাল রেখে ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনারকে নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. সুয়েব হোসেন চৌধুরী অভিযোগ নিষ্পত্তির একটি রেজুলেশন (যার
স্মারক নং- ৪১.০১.৫৮৫৬,০০০.১৪.৮৩.২৫.০৯) উভয় পক্ষের বরাবর প্রেরন করেন।
এতে বলা হয় – ‘বিগত ২৯ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল ফজল মোঃ আব্দুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন আরাফাত রবিন স্বাক্ষরিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করার জন্য পত্র প্রদান করেন এবং উক্ত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২৭ জন উল্লেখ করে ভোটার তালিকা দাখিল করেন। এ পত্রে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার অনুরোধ জানানো হয়।
তৎপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শ্রীমঙ্গল মহোদয় তাঁর কার্যালয়ের স্মারক নং- ০৫,৪৬.৫৮৮৩,০১০,০১,০০৬.২৩,১০২৪ তারিখঃ ৩০/১২/২০২৪ খ্রিঃ মোতাবেক আমাকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেন এবং আমি নির্বাচন কমিশনার হিসাবে গত ১ জানুয়ারি প্রেসক্লাবের সকল সদস্যগণের সঙ্গে সভা করি এবং সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ অবস্থায় গত ৫ জানুয়ারি মনোনয়ন পত্র বিতরণ চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর ভট্টাচার্য্য লিটন ও সনেট দেব চৌধুরী ভোটার তালিকায় তাদের নাম না থাকায় লিখিত আপত্তি দাখিল এবং তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছেন। তাছাড়া ৬ জানুয়ারি সৈয়দ আবু জাফর সালাউদ্দিন গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও তফসিল বাতিল করার আবেদন করেন।
এমতাবস্থায় অদ্য ৬ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে তাঁর কার্যালয়ের সভাকক্ষে আপত্তি নিষ্পত্তিকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিস্তারিত আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, যেহেতু প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রেসক্লাবের কমিটি কর্তৃক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয় এবং বিগত নির্বাচনেও প্রেসক্লাব কমিটি কর্তৃক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রের ১৪-১(ট) ধারা মোতাবেক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সাথে সাথে নতুন সদস্যদের তালিকাভুক্তি বন্ধ হবে মর্মে উল্লেখ রয়েছে। ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করণের পর তফসিল ঘোষণা হয়েছে সেহেতু দীপঙ্কর ভট্টাচার্যা লিটন ও সনেট দেব চৌধুরী’র ভোটার তালিকায় অন্তভুক্তি’র দুটি আবেদন খারিজ করা হলো’।
চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও তফসিল বাতিল এর অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়, যেহেতু বিগত ২৭ অক্টোবরের প্রেসক্লাবের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক জনাব মোঃ ইদ্রিস আলী’র বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তৎসময় হতে তফসিল ঘোষণার সময় পর্যন্ত জনাব মোঃ ইদ্রীস আলীর বিষয়ে কেউ কোন আপত্তি উত্থাপন করেননি সুতরাং তফসিল ঘোষণার পর তা গ্রাহ্য হওয়া বাঞ্ছনীয় নয় বিধায় জনাব সৈয়দ আবু জাফর সালাউদ্দিন কর্তৃক দাখিলীয় অভিযোগটি খারিজ করা হলো’।
জানতে চাইলে, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলি বলেন, ‘২০১৯-২০ সালে দেশে করোনা মহামারী চলাকালে আমার উদ্যোগে ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সোন তারেক রহমানের নির্দেশনায় এবং লন্ডন প্রবাসী বিএনপিনেতা সরফু উদ্দিনের আর্থিক সহায়তায় শহরের গোর খোদক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ সম্মুখ সারির মানুষদের মাঝে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব হলে পিপিই বিতরন করা হয়। ২০১৯ সালের ওইদিন তারেক রহমানের পক্ষে প্রেসক্লাবে পিপিই বিতরনের অপরাধে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা শহর থেকে মিছিল নিয়ে এসে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আমাকে প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কারের দাবি জানায়। শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি বিশ্বজ্যেতি চৌধুরীসহ ও সাংবাদিক নামধারী কিছু আওয়ামী দোসর আওয়ামী যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং সাজানো সভা করে আমার বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়’। ‘সেদিন গঠনতন্ত্র কোথায় ছিল? এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমার সেই বহিষ্কারাদেশ ছিল রাজনৈতিক। তারেক রহমানের নির্দেশে পিপিই বিতরন করলে বহিষ্কার হতে হবে- দেশের কোন গঠনতন্ত্র তা লেখা নেই’। এম ইদ্রিস আলি বলেন, ‘তারেক জিয়ার উপহার করোনায় অসহায়দের মাঝে বিতরনের অপরাধে আমাকে শুধু বহিষ্কার নয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে অপদস্ত করা হয়েছে। পারিবারিক ও মানিসক যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে তা কখনো পূরন হবার নয়। রাজনৈতিক হয়রানি থেকে জীবন বাঁচাতে স্বপরিবারে বিদেশে পালিয়ে আত্মরক্ষা করতে হয়েছে’। তিনি বলেন, ‘৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে প্রেসক্লাবের সচেতন সদস্যরা আমার বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে গত ২৭ অক্টোবর কার্যনির্বাহী সভা করে সংখ্যাগরিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে আমার সদস্য পদ ফিরিয়ে দিয়েছে। যা পরবর্তীতে সাধারন সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়’।
তিনি বলেন, ‘১৫ জানুয়ারি ক্লাবের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা প্রশাসন নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। সৈয়দ সালাউদ্দিন তারেক রহমানের পিপিই বিতরন করায় সেদিন তিনি আওয়ামী যুবলীগের সন্ত্রাসীদের সাথে হাত মিলিয়ে আমাকে বহিষ্কারে ইন্ধন যুগিয়েছিলেন। তার সেই অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আওয়ামী দোসর হিসেবে সমাজে চিহ্নিত হয়েছেন। ১৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নিজের নিশ্চিত ভরাডুবি বুঝতে পেরে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন’। এম ইদ্রিস শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের নির্বাচন নির্ধারিত দিনেই হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে কোন অপচেষ্টা ক্লাবের সদস্যরা কঠোর ভাবেই প্রতিহত করবে’।