স্টাফ রিপোর্টারঃ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লেমন গার্ডেন রিসোর্টের কক্ষে হত্যাকাণ্ডে শিকার পর্যটক শরীফুল ইসলাম (৪১) এর হত্যায় জড়িত শান্ত ঘোষ নামের এক যুবককে আটক করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। একইসাথে হত্যাকাণ্ডের পর অভিযুক্তদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি ইতোমধ্যে ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ জব্দ করে শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তথ্যটি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শ (অপারেশন) তাপস চন্দ্র রায়।
বুধবার (৩০ আগস্ট) বিকেল ৪ টায় শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, সোমবার (২৭ আগস্ট) গভীর রাতে গুলশান থানাধীন মামেন্টু হাউজ ৪৩/এ (১০তলা বিল্ডিং এর গ্রাউন্ড ফ্লোর), রোড ১১৬ ডিএমপি ঢাকা থেকে সাদা রঙের এক্সিও করলা জব্দ করে শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। গাড়ি নং : ঢাকা মেট্টো গ-২২/৯১৫৬
ওসি বলেন, খুনের ঘটনার পরদিন সোমবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফাইভ স্টার মানের রিসোর্টের ফুড অ্যান্ড ব্যাভারেজ-এ দায়িত্বরত শান্ত ঘোষ-কে শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসা হয়। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে পলাতক রাব্বি শান্ত ঘোষের পূর্ব পরিচিত। শান্ত ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদে এবং তদন্তে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মাণ হয়েছে যে, সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত। সে ঘটনার সময় এবং ঘটনার শেষ সময়েও উপস্থিত ছিল।
শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ও তদন্ত কর্মকর্তা তাপস চন্দ্র রায় বলেন, মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান এর নির্দেশে এবং শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ঘটনায় জড়িত শান্ত ঘোষ (২৪) কে আটক করা হয়েছে। আটককৃত শান্ত ঘোষ কাকিয়া ছড়া চা বাগানের কাশিনাথ ঘোষের পুত্র। সে ফাইভ স্টার মানের রিসোর্টের স্টাফ।
এদিকে খুনের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মুন্নী বেগম বাদী হয়ে ৩ জনকে আসামি করে গত সোমবার সকালে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
নিহতের স্ত্রী মুন্নী বেগম গণমাধ্যমকর্মীকে জানান, তার স্বামী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। ঢাকার ভাটারা এলাকায় কাগজের কার্টন কেনাবেচার ব্যবসা ছিল। তাদের মূল বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার হাঁটুভাঙ্গা গ্রামে। বর্তমানে তারা ভাটারা এলাকার ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের ফাসেরটেক নামক স্থানে সপরিবারে বসবাস করছেন। তাদের আরেকটি ছেলে রয়েছে। তিনি আরও জানান, গত রোববার শ্রীমঙ্গল থানা থেকে একজন কর্মকর্তা ফোনে তার স্বামীর নিহতের কথা জানান। রাতেই তিনি তার ছোট ভাই, দেবর, দেবরের শ্যালকসহ ছুটে আসেন শ্রীমঙ্গলে। পরদিন সোমবার সকালে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এর আগে গত রোববার রাত ৮ টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার ডলুবাড়ি এলাকার লেমন গার্ডেন রিসোর্ট থেকে শরীফুল ইসলাম (৪১) নামের এক পর্যটকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার হাঁটুভাঙ্গা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামানের ছেলে। শরীফুল ঢাকার ভাটারা এলাকার ৪০নং ওয়ার্ডের ফাঁসেরটেকে বসবাস করছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৯টার ভেতরে যেকোনো সময় শরীফুলের মাথায় কাঠের বর্গা দিয়ে একাধিকবার আঘাত করে খুন করা হয়। কারণ-নিহত ব্যক্তির মাথায় ও মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সে কারণে মুখমণ্ডল একেবারে বিকৃত হয়ে গেছে।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, আটক হওয়া শান্ত ঘোষ-কে বুধবার দুপুরে রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে মৌলভীবাজার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারলে ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে। তবে আটক হওয়া শান্ত ঘোষ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে এখন সবকিছু বলা যাচ্ছে না। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে আমাদের তৎপরতা চলমান। আশা করছি খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে পারবো।
ছবি : আটক হওয়া শান্ত ঘোষ