স্টাফ রিপোর্টার;
রেলের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধে প্রতিবাদী অবস্থান নিয়েছেন মহিউদ্দিন রনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে একাই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে চলছেন। রেল ব্যবস্থা সংস্কারে তিনি তুলে ধরেছেন ছয় দফা দাবি। কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে এই যুবকের প্রতিবাদী অবস্থান কৌতুহলী করে তোলে যাত্রীদের। থমকে দাঁড়িয়ে তারা শোনেন এই যুবকের কথা। এ যেন তাদের সকলের নিজেদেরই মনের কথা। সবার হয়ে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন মহিউদ্দিন রনি নামের এই প্রতিবাদী যুবক।
গত ১৩ জুন রাজশাহী যেতে টিকিট কাটার চেষ্টা করেন রনি। কিন্তু তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হলেও পাননি টিকিট। অভিযোগ করেও মেলেনি কোনো প্রতিকার। রেলওয়ের এমন অব্যবস্থাপনা এবং ভোগান্তির প্রতিবাদে ৭ জুলাই থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন রনি।
মহিউদ্দিন রনি বলেন, আমি শান্তি চাচ্ছি, সম্প্রীতি চাচ্ছি। যেহেতু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আমি সম্প্রীতির ভাষায় আমার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি একাই প্রতিবাদটা জানাচ্ছি যাতে ভিড় না হয়। গণপরিবহনের সামনে ভিড় তৈরি হলে কিন্তু মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। আমি যদি সমস্যার সমাধান চাইতে এসে আরও সমস্যা তৈরি করি তাহলে কিন্তু এই প্রতিবাদের কোনো মানে হয় না। আমার ছয় দফা দাবি হলো, (১) টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহজ ডট কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে ও হয়রানির ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে; (২) যথোপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে টিকিট বিক্রিতে কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে; (৩) অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা, বিশেষ করে ভিআইপিদের ক্ষেত্রে টিকিট বুক করা বন্ধ করতে হবে; এবং, অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে; (৪) যাত্রীচাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে; (৫) ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক-তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক নজরদারি ও শক্তিশালী তথ্য সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বাড়াতে হবে; এবং (৬) ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
মহিউদ্দিন রনি আরও বলেন, ৩ নম্বর পয়েন্টটা পরিষ্কার করতে চাই। সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট অনুসারে দেশে ভিআইপি দুইজন; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এখানে এসে যার তার নামে ভিআইপি টিকিট কাটা যায়। গত ১৩ জুন অনলাইনে আমি চারটি টিকিট বুক করি। এরপর বিকাশ অ্যাপের পেমেন্ট অপশনে যাই। সেখানে আমার নম্বর দেই। তারপর একটা ভ্যারিফিকেশন কোড আসে। তারপর দেখি, আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। আমি অবাক হলাম এজন্য যে, পিনকোড ছাড়া কীভাবে টাকা কেটে নিলো! টিকিট বা ডকুমেন্টস, কিছুই দেয়া হয়নি। আমি শঙ্কায় পড়ে যাই। এরপর বিকাশের কল সেন্টারে ফোন দেই। তারা জানায়, সহজ ডটকমের সার্ভার থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে টিকিট না দিলে সহজ ডটকমে যোগাযোগের ব্যাপারে বলা হয়। আমি কমলাপুর রেলস্টেশনের দোতলায় সহজ ডটকমের সার্ভারে আসি। সেখানে গিয়ে আমার সমস্যার কথা বলি। নিউটন বিশ্বাস নামে একজন অপারেটর ছিলেন। তাকে জানাই, রাজশাহীতে টিকিট পাঠাতেই হবে; টিকিট দেয়া যাবে কিনা। তিনি বলেন, এটা তাদের সিস্টেম ফল্ট। সিট ব্লকড হয়ে গেছে বলে টিকিট দেয়া যাবে না। তাদের কিছুই করার নেই।
দুর্ভোগের পরও বেশিরভাগই যেখানে মুখ বুঝে সয়ে যান সেখানেই ব্যতিক্রম রনি। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী নজর কাড়ছেন যাত্রীদের। অনেকে জানাচ্ছেন সংহতি। অনেকেই বলছেন, রনির দাবিগুলো শুধু তার না, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষের।
এক সপ্তাগের বেশি সময় ধরে প্রতিদিনই কমলাপুর রেলস্টেশনের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী অবস্থান নিচ্ছেন রনি। বেশিরভাগ সময়ই থাকেন একা। কখনো কখনো তার সঙ্গে যোগ দেয় বন্ধুরা। তার বিশ্বাস, উদ্যোগ নিলে বদলে ফেলা সম্ভব রেলের জঞ্জাল। তবে স্টেশন কর্তৃপক্ষের হুমকির কারণে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন রনি।
মহিউদ্দিন রনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার দাবিগুলো মেনে নেয়া হচ্ছে, আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না। আর যদি মেনে নেয়া হয়, আমি প্রতিটি বিষয় তদারকি করবো এই সমস্যা সমাধানের জন্য। তারা যদি ব্যর্থ হয়, যদি সারেন্ডার করে বলে যে, আমরা পারবো না; তবে আমি কথা দিচ্ছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক আছেন তাদের নিয়ে আসবো। যদি আমাদের দিয়েও কাজ না হয় তবে অক্সফোর্ড থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষকদের নিয়ে আসবো। সমস্যা খুঁজে বের করবো, সমাধান করবো। কোনো টাকাপয়সা আমাকে দিতে হবে না। এই সমস্যার আমি সমাধান করবো।