ভারত সকল পানি ছেড়ে দিয়েছে আমাদের ভাসিয়ে দেয়ার জন্য : জামাতের আমির
স্টাফ রিপোর্টারঃ
বন্যাকবলিত মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দিনব্যাপী মৌলভীবাজার জেলার সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
প্রতি প্যাকেট ১৫ কেজি করে রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ৫শ’ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে ফুড প্যাকেট উপহার প্রদান করেন। প্রতি প্যাকেটে চাল ৮ কেজি, আলু ৩ কেজি, পেঁয়াজ ২ কেজি, লবণ ১ কেজি, তেল ১ লিটার, শুকনো খাবারসহ সহ জরুরি ওষুধ।
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মৌলভীবাজার শহর, রাজনগর কলেজ পয়েন্ট, কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজার এবং কুলাউড়ার টিলাগাঁও এলাকায় সংক্ষিপ্ত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বক্তব্যে তিনি বলেছেন, আজ থেকে কয়েকদিন আগে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে বিরাট একটি পরিবর্তন এসেছে। সাড়ে সতেরো বছর জাতির ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে রাখা হয়েছিল। প্রথম দুই বছর আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল মঈন ফখরুদ্দিন সরকার, তারপরের পনেরো বছর সরাসরি তারা নিজে। এই সাড়ে পনেরো বছরে জাতির কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আঘাত হেনেছে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর উপর। পিলখানায় বিডিআরের সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাকাণ্ড করা হয়। সেখানে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকস সামরিক অফিসারকে হত্যা করা হয়। তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন হরণ করা হয়। তাদেরকে হত্যা করে ড্রেনে ভাসিয়ে দেয়া হয়। মর্মান্তিক এই দৃশ্যের কষ্ট জাতি বয়ে বেড়াচ্ছে। এরপরের আঘাতটাই আসে জামায়াতে ইসলামীর উপর। ঠিক যেভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল তেমনি বিচারের নামে জামায়াতের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। আমাদের হাজার হাজার সহকর্মীকে পঙ্গু করা হয়েছে। দুই একজনের জীবন্ত দেহ থেকে চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। থানায় সুস্থ মানুষকে ধরে নিয়ে মেঝেতে ফেলে সুস্থ মস্তিষ্কে গুলি করে পা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। শুধু কি তাই হাজার হাজার মামলা লাখ লাখ কর্মীকে জেলে নেয়া হয়েছে। চাকুরী থেকে আমাদের লোকদের বরখাস্ত করা হয়েছে। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে এবং লুট করে দেশকে অর্থনৈতিকভাকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। ক্ষমতায় যখন ছিলেন তখন সরকার প্রধান কথায় কথায় বলতেন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রাজপথে তুলে এনেছেন, কানাডা ও সিঙ্গাপুর বানিয়েছেন। আমাদের ইতিহাস জ্ঞানে তো কখনো দেখি নাই, কানাডা ও সিঙ্গাপুর বানিয়ে এইভাবে কোন শাসক ও দোসরদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়। আপনারা পালাবেন কেন? আমাদের নেতৃবৃন্দকে আপনার হত্যা করেছেন আমাদের কোন নেতা দেশ ছেড়ে পালাননি। এটি আমাদের বাবা দাদাদের দেশ। আমাদের কোন খালা-মাসির দেশ নয়। বাংলাদেশ আমাদের জন্ম-মৃত্যুর শেষ ঠিকানা। যে সরকার আমাদের দেশে ছিল, তারা আমাদের সিঙ্গাপুর উপহার দিয়েছিলো। এই আমাদের রাজনগরের সিঙ্গাপুর।
তিনি আর বলেন, প্রত্যেক বছর নদী শাসনের জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়। কিন্তু এটাকে সুষ্ঠুভাবে কাজ না লাগিয়ে লুটপাট করা হয়। লুটপাটের কুফল যন্ত্রণা জনগণকে ভোগ করতে হচ্ছে। এখন তারা পালাতে গিয়ে বস্তা নিয়ে পালায়। কাজেই বাংলাদেশ আমাদের আওয়াল (প্রথম) এবং আখের (শেষ) ঠিকানা।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কলেজ পয়েন্টে বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে ফূডপ্যাক উপহার প্রদানের সময় আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
আমীরে জামায়াত বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আরও বলেন, বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ফেনী ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। ফেনী মানুষ এখনো লাশ দাফন করার জায়গা পাচ্ছেন না। এবার আসমান যেমন আমাদের জন্য দুয়ার খুলে দিয়েছে বৃষ্টির জন্য তেমনি ভারতও সকল পানি ছেড়ে দিয়েছে, ভাসিয়ে দেয়ার জন্য। আমরা ৫৩ বছর ধরে শুনে আসছি, ভারত আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু। এবার তারা পানি ছাড়লো কিন্তু আমাদেরকে বললোও না।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ যে জঘন্য কাজ করেছে, আপনার তা করবেন না। কারো বাড়ি ঘর সম্পদ নষ্ট করবেন না। এক জালেম বিদায় হয়েছে আরেক জালেম যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে। তিনি যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন আমাদেরকে নির্মূল করার জন্য, সেই ট্রাইব্যুনালে আল্লাহ চাইলে তাদেরকেই উঠতে হবে।
পথসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম, সিলেট দক্ষিণ জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, আঞ্চলিক টিম সদস্য ও সাবেক জেলা আমীর মোঃ আবদুল মান্নান, জেলা আমীর ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শাহেদ আলী, জেলা সেক্রেটারি মোঃ ইয়ামীর আলী, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মোঃ আলা উদ্দিন শাহ।
এর আগে রাজনগর উপজেলা আমীর আবু রাইয়ান শাহীনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মিছবাউল হাসানের পরিচালনায় কলেজ পয়েন্টে সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য সৈয়দ তারেকুল হামিদ, মৌলভীবাজার পৌর আমীর হাফেজ তাজুল ইসলাম, সদর উপজেলা আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম, ছাত্রশিবির শহর সভাপতি তারেক আজিজ, জেলা সভাপতি হাফেজ আলম হোসাইন, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা আহমেদ ফারুক, পৌর সেক্রেটারী আনোয়ার হোসেন চৌধুরী মুর্শেদ, সদর উপজেলা সেক্রেটারী দেওয়ান আশিক আল রশীদ চৌধুরী, ছাত্রশিবির শহর সেক্রেটারি মাসুদ রানা তুহিন, জেলা সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন, রাজনগর উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মোঃ শাহাব উদ্দিন, রাজনগর সদর ইউনিয়ন আমীর দেলোয়ার হোসেন বাবলু, টেংরা ইউনিয়ন সভাপতি মাহমুদুর রহমানসহ কমলগঞ্জ এবং কুলাউড়া জামাত-শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন