ডেস্ক রিপোর্টঃঃ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রদলের পূর্নাঙ্গ শাখা কমিটি হয় না প্রায় ৮ বছর। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে একাধিকবার নতুন শাখা কমিটি গঠনের উদ্যেগ নেওয়া হলেও বাস্তবে তা ফলপ্রসূ হয়নি। তবে শিগগিরই নতুন কমিটি পেতে যাচ্ছে বলে আশাবাদী জাবি শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
কিন্তু কমিটি নিয়ে ধুয়াশায় আছেন নেতাকর্মীরা। নেতৃত্বে কারা আসবেন, কত সদস্যের কমিটি হতে যাচ্ছে, আহ্বায়ক কমিটি হবে নাকি পূর্নাঙ্গ কমিটি হবে, নাকি সাময়িক দায়িত্বের আহ্বায়ক কমিটি হবে এসব নিয়ে রেষারেষির সৃষ্টি হয়েছে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে।
আসিফ সারজিস হাসনাতসহ অনেকের ফেসবুক আইডি হ্যাকডআসিফ সারজিস হাসনাতসহ অনেকের ফেসবুক আইডি হ্যাকড।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের সর্বশেষ পূর্নাঙ্গ শাখা কমিটি গঠিত হয়। আর হল কমিটি গঠিত হয় ২০১২ সালের জুনে। ২০১৬ সালে সোহেল-সৈকতের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের কমিটি পায় জাবি ছাত্রদল।
২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি সংগঠনের শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সংগঠন থেকে বহিষ্কার হন তৎকালীন সভাপতি সোহেল রানা। পরের বছরের ১৫ অক্টোবর বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় জাবি শাখা ছাত্রদলের কমিটি। এরপর থেকে নতুন নেতৃত্ব পায়নি সংগঠনটির জাবি শাখা।
এদিকে কমিটি গঠন না হলেও এ সময়ে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ৩টি কমিটি গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে, কয়েকবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জাবি ছাত্রদলের কমিটি গঠনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
বছরের প্রথম দিনে ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ ৬৫ পদে রদবদলবছরের প্রথম দিনে ডিআইজি, পুলিশ সুপারসহ ৬৫ পদে রদবদল
সর্বশেষ জাবি শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়াকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন। গত ৩০ নভেম্বর তাকে এ দায়িত্ব প্রদান করা হয় এবং পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত ২ ডিসেম্বর জাবি শাখা ছাত্রদলে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মীরা। মতবিনিময় সভায় বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল শিগগিরই নতুন কমিটি গঠনের আশ্বাস দিলেও এরপর প্রায় ১ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে মতবিনিময় সভার পর থেকে জাবি ছাত্রদলের নেতৃত্বে শিক্ষাজীবন শেষ হওয়া সিনিয়ররা আসবেন নাকি ছাত্রত্ব রয়েছে এমন জুনিয়র নেতাকর্মী আসবেন তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
শহিদ মিনারে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমাবেশ শনিবারশহিদ মিনারে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সমাবেশ শনিবার
শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পাঁচটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমে নেন। প্রত্যেক গ্রæপের নেতাকর্মীরা আলাদাভাবে শাখা কমিটির সাবেক পাঁচজন নেতার অনুসারী বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে থাকেন।
শাখা কমিটিতে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী সিনিয়র নেতাকর্মীরা অধিকাংশই ৩৯ তম ব্যাচ ( ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ) ও ৪০ তম ব্যাচের (২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী। পদপ্রার্থী সিনিয়রদের মধ্যে রয়েছে, রাকিবুল ইসলাম শুভ (৪০ ব্যাচ), সেলিম রেজা (৪০ ব্যাচ), জরজিস মোহাম্মদ ইব্রাহিম (৪১ ব্যাচ), এস এম ফয়সাল (৩৯ ব্যাচ), মেহেদী হাসান(৪০ ব্যাচ), জহির উদ্দিন বাবর (৩৯ ব্যাচ), আফফান আলী (৩৯ ব্যাচ), রাশিদুল ইসলাম রোমান(৪০ ব্যাচ), নবীনূর ইসলাম(৩৯ ব্যাচ), ওয়াসিম আহমেদ অনীক (৪০ ব্যাচ), হুমায়ুন হাবীব হিরণ (৪০ ব্যাচ) ও ৪৩ ব্যাচের নাইমুল কৌশিক (৪৩ ব্যাচ)।
রাবিতে পোষ্য কোটা বাতিল, কর্মচারীরা পাবে ১%রাবিতে পোষ্য কোটা বাতিল, কর্মচারীরা পাবে ১% তাদের অধিকাংশরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে প্রায় ৬-৭ বছর আগে। আবার কেউ কেউ ছাত্রলীগের তোপের মুখে স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারেননি।
নতুন শাখা কমিটিতে পদপ্রার্থী জুনিয়র নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম ব্যাচ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ) থেকে ৪৮তম ব্যাচের (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে রয়েছেন ৪৬তম ব্যাচের মাহবুবুর রহমান মুরাদসহ ৪৬ ও ৪৮ ব্যাচের কয়েকজন নেতাকর্মী।
ক্যাম্পাসে সক্রিয় একাধিক গ্রুপে বিভক্ত এসব নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে অন্তকোন্দল।
সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন: তারেক রহমানসংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন: তারেক রহমান শাখা কমিটিতে পদপ্রত্যাশী সিনিয়র নেতাকর্মীরা বলছেন, জুনিয়র নেতাকর্মীদের অধিকাংশই ৫ আগষ্টের পরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাংগঠনিক ভীত এখনো শক্তভাবে তৈরি হয়নি।
ক্যাম্পাসে সুষ্ঠুধারার রাজনীতি ও সাংগঠনিক কাঠামো সুদৃঢ় রাখার স্বার্থে ত্যাগী, নির্যাতিত ও পদবঞ্চিত সিনিয়র নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে আসা জরুরি।
তবে পদপ্রত্যাশী জুনিয়র নেতাকর্মীরা বলছেন, ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ও পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করার স্বার্থে ছাত্রত্ব রয়েছে বা সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে এমন শিকার্থীদের মধ্যে থেলে ত্যাগী ও যোগ্য ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আসা এখন সময়ের দাবি।
সিনিয়রদেরকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেওয়া হলে তারাও আর পদবঞ্চিত থাকবে আবার ক্যাম্পাসের জুনিয়রদেরও যোগ্য করা সম্ভব হবে।
‘নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করলে পরিণতি ফখরুদ্দিন-মঈনের মতো হবে’‘নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করলে পরিণতি ফখরুদ্দিন-মঈনের মতো হবে’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জাবি ছাত্রদল নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ক্যাম্পাসে ৩৯ বা ৪০ ব্যাচের কেউ নেতৃত্বে আসা হবে অযৌক্তিক। সিনিয়ররা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করলে জুনিয়রদের সঙ্গে সমন্বয় নাও হতে পারে। এতে করে সংঘর্ষ বা বিভেদের আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে। এজন্য দরকার জুনিয়রদের মধ্যে থেকে নেতৃত্ব আসা।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম মন্তব্য করতে রাজি হননি। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়াকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা সাড়া দেননি।