চা–বাগানের নারী কর্মীদের জীবন যেমন

মাস দুয়েক আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ভাসানী কালিন্দীর স্বামী। তারপর এক সন্ধ্যায় হঠাৎ তিনি মারা যান। আচমকা ভাসানীর একার কাঁধে এসে পড়ে দুজনের আয়ে চলা সংসার। তারপর থেকে দিনে ১২০ টাকা আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ভাসানীর চেহারায় দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ের গাঢ় ছাপ।

২০ বছর আগে হবিগঞ্জের একটি চা–বাগানে বধূ হয়ে এসেছিলেন ভাসানী কালিন্দী, তখন থেকেই এ বাগানে চা–পাতা তোলার কাজ করছেন। ৩৫ বছর বয়সী কালিন্দী এখন এই বাগানের স্থায়ী কর্মী। তাঁর মা-বাবাও চা–কর্মী ছিলেন। স্বামীর পরিবারও বংশপরম্পরায় এই পেশায়। অর্থাভাবে স্বামীর ঠিকঠাক চিকিৎসা করতে না পারার কষ্ট তাঁকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

কে না জানে, দারিদ্র্যে পুরুষের চেয়ে নারীর বিপদই বেশি। অপুষ্ট দেহে কঠোর পরিশ্রম, উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ, বাল্যবিবাহ, বেশি সন্তান জন্মদান, অস্বাস্থ্যকর মাসিক ব্যবস্থাপনা, প্রজননস্বাস্থ্যে কম নজর ইত্যাদির আঘাত চা–বাগানের নারীকে আরও বিপদাপন্ন করে, আরও কোণঠাসা করে।

নারীপ্রধান পরিবার বেশি দরিদ্র

ইউনিসেফের সহায়তায় ‘সিলেট বিভাগের চা–বাগানের নারী ও শিশুদের সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদারে করণীয়’ শীর্ষক একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)। এ–বিষয়ক একটি প্রতিবেদন এ বছরের মার্চে প্রকাশ করেছে তারা। দেশে চা–কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে অস্থায়ী কর্মী ৩৬ হাজার। মোট চা–কর্মীর ৫০ শতাংশ নারী। দেশে নিবন্ধিত চা–বাগানের সংখ্যা ১৬৬। এর মধ্যে সিলেট বিভাগেই আছে ১৩৫টি, যার মধ্যে ৩৫টি বাগানের দুই হাজারের বেশি চা–কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে র‌্যাপিড। প্রতিবেদন বলছে, ৬১ শতাংশ চা–কর্মী ও তাঁদের পরিবার দরিদ্র, যা জাতীয় দারিদ্র্য হারের ৩ গুণ বেশি। চা–বাগানে চরম দারিদ্র্যের হার প্রায় ৪৩ শতাংশ। আবার পুরুষপ্রধান পরিবারে চরম দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ হলেও নারীপ্রধান পরিবারে এ হার ৪৭ শতাংশ।