গোয়াইনঘাটে বি এন পি নেতার’র বেপরোয়া চাঁদাবাজি, নির্বিকার প্রশাসন!

 

স্টাফ রিপোর্টারঃঃ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দলীয় এক শ্রেণির নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও লুটপাট ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরকারের পতনের দিনই নেতাকর্মীদের আইন নিজ হাতে তুলে না নিতে কঠোর বার্তা দেন।

এরই অংশ হিসেবে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও দখলবাজির অভিযোগে ইতোমধ্যে কয়েকশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা।

তার পরও থেমে নেই চাঁদাবাজি-দখলবাজির অভিযোগ। দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলার মতো এক বিএনপি নেতার চাঁদাবাজি ও লুটপাটে অতিষ্ঠ গোয়াইনঘাট উপজেলার মানুষ।

তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহিন আহমদ। তার ক্যাডারবাহিনীর বিরুদ্ধে উঠেছে চোরাচালান, চাঁঁদাবাজি, হামলা ও লুটপাটের বিস্তর অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ই আগস্ট ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হওয়ার পর সারা দেশের মানুষ যখন বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেন।

ঠিক তখনই বিএনপি নেতা শাহিনের নেতৃত্বে গোয়াইনঘাটের জাফলং ইউনিয়নের সোনারহাট বিজিবি ক্যাম্পে হামলা ও লুটপাট করা হয়।

এ সময় শাহীন ও তার বাহিনী বিজিবি ক্যাম্প থেকে কয়েক লাখ টাকার সম্পদ লুট করেন। তাদের হামালায় আহত হন সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবি’র সদস্যরা।

এই হামলা ও সরকারি সম্পত্তি লুটপাটের ঘটনায় সোনারহাট বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার রহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে শাহিন ও তার বাহিনীদের আসামি করে গোয়াইনঘাট থানায় মামলাও দায়ের করেন।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহীন পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির শীর্ষ এক নেতার সাথে সখ্যতার সুবাধে থানাপুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

যার ফলে শাহীন ও তার বাহিনী বিএনপির নাম ব্যবহার করে পশ্চিম জাফলং ও মধ্য জাফলং ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন।

শাহীনের বাহিনীর অন্যতম দুজন হলেন যুবদল নেতা জসিম ও সবুজ। শাহীন তার বাহিনী দিয়ে সীমান্ত দিয়ে অবাধে নিজে করছেন চোরচালান।

যারা চোরচালালনের সঙ্গে জড়িত তাদের কাছ থেকে নিচ্ছেন চাঁদা। সম্প্রতি বিগত ৫ই আগস্টের পর আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠা শাহীনের বিরুদ্ধে নৌকার মাঝিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও যারা শেয়ার করে প্রতিবাদ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে উল্টো থানায় অভিযোগ করেন শাহীন।

তাছাড়া মামলার আসামি হয়েও গোয়াইনঘাট থানায় শাহীনের অবাদ বিচরণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, বিগত ৫ই আগস্টের আগেও আর্থিক দুরবস্থায় হাদারপার বাজারে গরুর দালালি করতেন বিএনপি নেতা শাহীন।

প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর এই বিএনপি নেতা নিজ এলাকায় চাঁদাবাজি, লুটপাট ও দখলদার বাহিনী গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বলা হচ্ছে- চাঁদাবাজি, বিজিবি ক্যাম্পে লুটপাট, চোরচালান, মামলা দিয়ে হয়ারনীসহ বিভিন্ন অভিযোগ অভিযুক্ত শাহীন গোয়াইনঘাটে নিজস্ব সিন্ডিকেট দিয়ে নিয়ন্ত্রন করে এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। শাহীন রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।

এদিকে শাহীনের বিরুদ্ধে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলারশীপ অবৈধভাবে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সে মাতুরতল বাজারে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তার নিজ এলাকা মনরতল বাজারে তা বিতরণ করে আসছেন। সেই বিতরণেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, যেখানে বিএনপির হাইকমান্ড শীর্ষ নেতৃবৃন্দকেও বিভিন্ন অভিযোগে ছাড় দিচ্ছে না সেখানে শাহীন এভাবে এলাকায় নিজের বাহিনী তৈরি করে চোরচালান, চাঁদাবাজি, লুটপাট, মানুষকে মামলা দিয়ে অব্যাহতভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন।

সাধারণ মানুষকে করছেন হয়রানী। বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। শাহীনের নানা অপকর্মে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি। কিন্তু দল থেকে তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা অদৃশ্য কারণে।

এদিকে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের সাথে শাহীনের গভীর সখ্যতার কারণে বিজিবির দায়ের করা মামলার আসামী হওয়ার পরও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের নির্বিকার ভূমিকা পালন করার কারণে স্থানীয় জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরকার (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়ার পরও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি ।

এ ব্যাপারে জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়াইনঘাট থানার এসআই জহুর লাল দত্তের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এই মামলাটি আমার কাছে নেই।

এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অভিযুক্ত এস এম শাহিন আহমদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে মামলা আছে কিন্তু লুটপাট চাঁদাবাজির সঙ্গে আমি জড়িত নই।

 

বিজিবি ক্যাম্পে হামলার ঘটনার ব্যাপারে কিছু আমি জানিনা। ক্যাম্পে হামলার দিন আমি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর সাথে সিলেটে ছিলাম ।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, অভিযুক্ত বিএনপি নেতা যদি ৫ই আগস্টের পর বিজিবি’র ক্যাম্পে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় আসামি থাকেন তাহলে তিনি তো বহিষ্কার হওয়ার কথা ছিল।

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে লুটপাট, চাঁদাবাজি ও কোনও ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড করার সুযোগ নেই।

যদি কেউ করে থাকেন তিন যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এটা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের স্পষ্ট বার্তা।