নিজস্ব প্রতিবেদক :
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে সাবেক ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নাতি পরিচয়দানকারী হুমায়ুন আহমদকে নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড়া শুরু হয়েছে। অশিক্ষিত, স্বঘোষিত মূর্খ হুমায়ুনকে নিয়ে চলছে রাতভর আলোচনা।
চায়ের দোকান থেকে পাথর কোয়ারী, রাতের আঁধারে ভারতীয় অবৈধ বুঙ্গা, দেশ থেকে ভারতে স্বর্ণ চোরাচালান সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক এই বুম সাংবাদিক।
এলাকার লোকজনের অভিযোগ, হুমায়ুন জাফলং এলাকার অঘোষিত বুঙ্গার সম্রাট। তিনি রাতের আঁধারে তার বাহিনী নিয়ে বুঙ্গার মালামাল পারাপার, ইসিএ ভুক্ত এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনের চাঁদা আদায় এসবই তার পেশা।
হুমায়ুন আহমদের চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ গোয়াইনঘাটবাসী।অভিযোগ আছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছের লোক পরিচয় দিয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতেন।
তার বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে নিরীহ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানী, চোরাচালান, চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, বালু, পাথর লুটপাটসহ বিস্তর অভিযোগ ছিল। তার ছিল ছিলো নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী।
বিগত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতিত ফ্যসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর গোয়াইনঘাট থেকে পালিয়ে যান হুমায়ুন ওরফে এক টাকার হুমায়ুন।
কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর ফের গোয়াইনঘাট ফিরে আসেন কথিত সাংবাদিক নামধারী হুমায়ুন আহমদ।
নিজেকে মাইটিভির গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে শুরু করে ফের অস্ত্র চোরাচালান, মাদক, চাঁদাবাজী, বালু ও পাথর লুট। জাফলং এলাকায় প্রতিদিন পুলিশ, বিজিবি ও সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়ে ৫-১০ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করছে হুমায়ুন ও তার বাহিনী।
হুমায়ুনের বড় ছেলে সানোয়ার হোসেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক।
হুমায়ুন ও তার ছেলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে অস্তিতিশীল ও বর্তমান অন্তবর্তকালীন সরকারকে বিপদে ফেলতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথে মাইটিভির প্রতিনিধি হুমায়ুনের বর্তমানেও যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হোমনা থানার হুমায়ুন আহমদের পিতা আবদুল কাদির এক সময় পাথর শ্রমিকের কাজ করতে সিলেটের গোয়াইনঘাট আসেন। হুমায়ুন আহমদ বর্তমানে গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ের ছৈলাখেল ৮ম খন্ড এলাকায় বাসা থাকলেও তিনি বাসায় না থেকে মামার বাজারের এক বস্তিতে রাত্রি যাপন করেন।
তাছাড়া বিগত ৫ই আগস্ট ফ্যসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের একদফা চলাকালে সিলেট নগরীতে হুমায়ুন ও তার বাহিনী ছাত্র-জনতার উপর সশস্ত্র হামলা চালায়।
তবে ৫ই আগস্টের পরও কীভাবে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের এই দোসর এখনো আগের মত দাপট খাটিয়ে অস্ত্র চোরচালান, মাদক ব্যবসা, বালু-পাথর লুট করে যাচ্ছে তা নিয়ে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
তার এই কাজে সহযোগিতা করছেন প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও নামধারী কিছু সাংবাদিক, এবং গোয়াইনঘাট এলাকার বিএনপি নামধারী কিছু পাতিনেতা।
কয়েক বছর আগে হুমায়ুন আহমদ ওরফে একটাকার হুমায়ুন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে সোনার নৌকা উপহার দিয়ে আলোচনায় আসেন।
সেই সুযোগে রাষ্ট্রপতির বাসভবনে তারা অবাধ বিচরণ ছিল। তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের অনেক মন্ত্রী, এমপির সাথে রয়েছে তার ছবি। সেইসব ছবি ব্যবহার করে ও রাষ্ট্রপতির নাতি পরিচয় দিয়ে গোয়াইনঘাটের মানুষকে জিম্মি করে রেখিছিল সে। প্রশাসনও তাকে সমীহ করে চলতো।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সিলেটজুড়ে সেখানে সে দান্তিকতার সহিত বলতে শোন যায়, সে রাষ্ট্রপতির অতি কাছের লোক।
সারা গোয়াইনঘাটের সাংবাদিক এক পাল্লায় আর সে এক পাল্লায়। এমনকি শুধু গোয়াইনঘাটের নয় গোয়াইনঘাটসহ সিলেটের সব সাংবাদিক এক পাল্লায় থাকলেও তার পাল্লা ভারী হবে।
রাষ্ট্রপতির নামে সে একজন বুঙ্গার ব্যবসায়ীকে প্রতিদিন ১ লাখ টাকা চাঁদা দিতে বলে। তার বিরুদ্ধে করা ভিডিও দিয়ে সে করে মামলা বাণিজ্য নিরীহ মানুষদের উপর দেয় সাইবার মামলা। পরে বিবাদীদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়।
এলাকাবাসী জানান, মাইটিভি’র নাম ভাঙিয়ে জাফলং বল্লাঘাট জুমপাড়, পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন (ইসিএভুক্ত) এলাকায় ফ্যাসিবাদের দোসর হুমায়ুন ও তার দুই সহযোগিরর নের্তৃত্বে চলছে পাথর লুটপাট।
থানা পুলিশ, ইউএনও, এএসপি, এসপি, ডিআইজির, নাম ব্যবহার করে অন্যান্য পাথরের গর্ত থেকে প্রতিদিন ১৫ হাজার ও সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার জন্য প্রতি সাপ্তাহে ৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে।
দেশের পটপরিবর্তন হওয়ার পরও দাপটের সঙ্গে মাই টিভির নাম ভাঙিয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে দহরম মহরম সর্ম্পক তার। বারকী নৌকা শ্রমিকরা হুমায়ুনকে চাঁদা না দিলে প্রশাসন মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করায়।
জুমপাড় এলাকায় মাই টিভির নাম ভাঙিয়ে পাঁচটি ফেলুডার ও এক্সভেটর দিয়ে পাথর উত্তোলন হয় সেখানে অভিযান হয় না। এমন অভিযোগ বারকী শ্রমিকদের।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় রাষ্ট্রপতির দাপট ও দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিক সহ স্থানীয় সাংবাদিকদের নামে তিনটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে হুমায়ুন। তদন্তে মামলা গুলো মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় তৎকালীন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) রফিকুল ইসলাম শ্রাবন ও তদন্ত ওসি মেহেদী হাসান মামলা রেকর্ড করেননি। পরে মামলা গুলো কোর্টে দাখিল করলে তা সাজানো মামলা বলে প্রমাণিত হয়েছে।
চাঁদাবাজী ও নারী নির্যাতন সহ দুই টি মামলার আসামী এই কথিত সাংবাদিক। চাঁদাবাজি, জমি দখল সহ মিথ্যা মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে সবসময় আতংক সৃষ্টিকরেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাইটিভি’র পরিচয়দানকারী হুমায়ুন আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে হুমকির সুরে বলেন, ‘আমাকে চিনেন না, আমি কে’, আমার বিষয়ে খবর নিয়ে ফোন দিবেন।’ এরপর তিনি ফোন কেটে দেন। পরে একাধিক বার তাকে ফোন দেয়া হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদের মুঠোফোন কল দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।