শাহরিয়ার শাকিল, বড়লেখা(মৌলভীবাজার)প্রতিনিধি
মাটির দেয়ালে গাঁথা জোড়া বাংলাঘর এখন আর দেখা মেলে না। দেখা মেলে না গোলপাতায় কিংবা খড়ে ছাওয়া মাটিরঘর। বাড়ির সামনে সেই বৈঠকখানাও এখন বিলুপ্ত। চিরচেনা গ্রামও এখন অচেনা লাগে। শান্তির নীড় হিসেবে বহুল পরিচিত মাটির ঘরের স্থান দখল করেছে ইট-পাথরের উঁচু দালান। গরিবের এসি বলে সুপরিচিত মাটির দেয়ালে গাঁথা বাংলাঘর এখন বিলুপ্তির পথে।
আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের আবর্তে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি তীব্র গরম ও কনকনে শীতে আদর্শ বসবাস-উপযোগী মাটির তৈরি এসব ঘর আগের মতো এখন আর তেমন একটা নজরে পড়ে না।
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে হলেও মাটির ঘর চোখে পড়তো। প্রায় প্রতিটি গ্রামেরই ছোট সুন্দর মাটির ঘরগুলো ও ঘরের পরিবেশ সবার নজর কাড়তো। ছোট ছোট মাটির ঘরগুলোর কারণে প্রতিটি গ্রামকে স্বর্গরাজ্য মনে হতো। ঝড়, বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি তীব্র গরম ও শীত থেকে বাঁচতেও এই ঘরের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু কালের বিবর্তনে দালানকোঠা আর অট্টালিকার কাছে হার মানছে এই ঐতিহ্যবাহী চিরচেনা মাটির ঘর।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এক সময় এই সব এলাকায় প্রায় প্রতিটি ঘর ছিল মাটির তৈরি। কিন্তু আধুনিকতার সংস্পর্শে এখন মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। গ্রামে গ্রামে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। গ্রামীণ অর্থনীতির গতি সচল হওয়ায় মাটির ঘরের পরিবর্তে তৈরি হচ্ছে পাকা ঘর। কয়েক বছর পর পর মাটির ঘর সংস্কারের ঝামেলা আর ব্যয়বহুল দিক পর্যবেক্ষণ করে মাটির ঘরের পরিবর্তে দালান-কোঠা বানাতে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন এলাকার মানুষেরা।
জানা যায়, মাটির ঘর তৈরি করতে প্রথমে এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হতো। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় অথবা টিনের ছাউনি দেওয়া হতো। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের সময় লাগত দেড় থেকে দুই মাস।
এক সময় মাটিরঘরের কথা ইতিহাস হয়ে থাকবে; স্মৃতি খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর হয়ে যাবে। বাংলাদেশ লোক-কারুশিল্প কারুপল্লীতে হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারক-বাহক মাটির ঘর এখনও টিকে আছে। তবে সাধারণভাবে গ্রাম-বাংলা থেকে মাটির ঘর প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।