ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানগুলো
মোঃ আমজাদ হোসেন বাচ্চু, শ্রীমঙ্গল,
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল চা বাগানে পর্যটকের ঢল নেমেছে। ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে হাজারও পর্যটক। দেশি-বিদেশী মিলে মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে ৯৩টি চা-বাগান ও শতাধিক পর্যটন স্পট।
ঈদুল ফিতরের দিন থেকেই শ্রীমঙ্গল পর্যটক আসতে শুরু করে। দুইশত হোটেল-মোটেল ও কটেজে কোনো কক্ষই খালি নেই। ফলে রাত্রিযাপনে পর্যটকদের কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিলো।
হাওর,পাহাড়, নদী, টিলায় ঘেরা প্রকৃতি একেক ঋতুতে একেক রূপের জানান দেয়। চা গাছে নতুন কুঁড়িতে সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সবুজ গালিচা মোড়ানো চা-বাগান। প্রকৃতির এমন সান্নিধ্য পেতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন হাজারও পর্যটক।
বিশেষ করে জেলার শ্রীমঙ্গলে সবুজের বিশাল এই বিস্তারে ঘেরা সারি সারি চা বাগানের একটি পাতা দু’টি কুঁড়ি’র অপূর্ব সম্মিলন। দৃষ্টি সীমানা জুড়ে কেবলই প্রশান্তি।
শ্রীমঙ্গল ৭১বধ্যভূমির সুম্মখ থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে পুরো এলাকা জুড়ে চা বাগান। আর চা বাগানের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা পিছ ঢালা পথটি যেন আরো কয়েকগুন সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। সবুজ গালিচা মোড়ানো আসে-পাশের পাহাড় আর মন কাড়া পাহাড়ি ঢালু পথ। এই পথ মাড়িয়ে যেদিকে চোখ যাবে শুধু সবুজ আর সবুজ। সেই সঙ্গে পাহাড়ি পথ বেয়ে চা বাগানের ভেতর দিয়ে নেমে এসেছে ক্ষীণ স্বচ্ছ জলের ছড়া।
পর্যটন স্পটগুলোতে নেমেছে প্রকৃতি প্রেমীদের ঢল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পর পর্যটকদের কেনাকাটার জন্য রয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ পাহাড়ি ত্রিপুরা-মনিপুরী সম্প্রদায়ের হাতের তৈরি কাপড়ের একাধিক স্টল।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা কয় একজন পর্যটক বলেন, “ঢাকার কোলাহল আর যান্ত্রিক জীবন থেকে একটু মুক্তি পেতে আমরা প্রায়ই প্রকৃতির টানে ছুটে আসি সিলেট আর শ্রীমঙ্গলে। এখানে এসে যেন প্রাণ ফিরে পাই। ঢাকার মতো ব্যস্ত শহরে এমন সবুজ, শান্ত আর নির্মল পরিবেশ পাওয়া যায় না। তাই প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে আমরা বারবার এখানে চলে আসি।”
তবে অপর এক পর্যটক দম্পতি আনোয়ার হোসেন ও শিউলি বেগম বলেন, শীতে অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় বাগান ঘুরে দেখা কষ্টকর হয়ে পড়ে, বরং গরমকালেই তারা চা বাগানের সবুজ প্রকৃতি ভালোভাবে উপভোগ করতে পারেন।”
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, শ্রীমঙ্গল ঈদের দিন থেকে হাজারও পর্যটক আসায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট আর চা বাগানে লোকে লোকারণ্য। পুরো এলাকা জুড়ে পর্যটকের বিচরণ। যারা হোটেলের কক্ষ বুকিং না দিয়ে এসেছে, তাদেরই কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-, বাইক্কা বিল হাইল হাওর, বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডশন ,বধ্যভূমি-৭১, বিটিআরআই চা বাগান এলাকা, রাবার বাগান, সাত লেয়ারের চা, মনিপুরি পাড়া ও পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ, টি বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন টি রিসোর্টি এন্ড টি মিউজিয়াম, কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীর শ্রেষ্ট হামিদুর রহমানের স্মৃতি সৌধ, হাম হাম জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, আনারস ও লেবু বাগানসহ ইত্যাদি এই জেলা পর্যটকের জন্য প্রধান আকর্ষণ।
পর্যটকরা বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলে হৈ-হুল্লোড় করে ছুটে চলেছেন বিভিন্ন স্পটে।
‘ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে র্যাব, সাদাপোশাকে ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। পর্যটকরা যেন নির্বিঘে ঘোরাফেরা করতে পারেন, সেভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে প্রসাশন।’