বিশেষ প্রতিবেদকঃঃ
সিলেটের সুনামগঞ্জের ছাতকে ফ্যাসিবাদের দোসর ভূমিখেকো মাহববুর রাজা চৌধুরী রিপনের বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাজ্যে অবস্থান করে দেশে থাকা নিজের পোষ্য সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে তিনি মানুষকে ভয় ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ভূমি দখল করছেন বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
ছাতকের একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে বিস্তর অভিযোগ।
ভূমিখেকো মাহবুবুর রাজা গংদের ত্রাস ও ভূমিদখলের বিরুদ্ধে অনেকে ভয়ে আইনের আশ্রয় না নিলেও কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। একের পর এক হুমকিতে তারা ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে দিন অতিবাহিত করছেন।
অভিযোগকারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের মৃত সাজ্জাদুর রাজা চৌধুরীর ছেলে মাহবুবুর রাজা চৌধুরী রিপন দীর্ঘদিন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে একের পর এক ভূমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে তার লোলুপ দৃষ্টি পরে শিমুলতলা গ্রামের মেজর আতউর রহমান চৌধুরীর বসতভিটার উপর।
মেজর আতাউরের বসতভিটার দখল নিতে তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলাও চালান মেজর আতাউরের সন্তানদের ওপর।
স্থানীয় শিমুলতলা গ্রামের আওয়ামী সন্ত্রাসী এনায়েত আলী ইনাই, ফিরোজ মিয়ার ছেলে সুরাই, জমির আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন ওরফে বুতুছলা, হরমুজ আলীর ছেলে আব্দুল মুকিত ও আখলিছ মিয়ার ছেলে বেলাল আহমদের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী লোহার রড, বাঁশের লাঠি, দা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে গত বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি সকালে ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে মেজর আতাউর রহমানের বসতভিটায় হামলা চালায়।
তারা বাড়ির বাগানের সেগুন গাছ, বেত বাগান, বাঁশঝাড় ও ফসলাদি কেটে লুট করে নিয়ে যায়। লুট করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। তারা বাড়ির চারিদিকে পেট্রোল দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।
এসময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে বাড়ীতে বসবাসকারীরা আগুনে পোড়া থেকে রেহাই পান। তবে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয় বাড়ির আশপাশের এলাকা। সন্ত্রাসীরা প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মেজর আতাউর রহমানের বড় ছেলে মো. মাহমুদুর রহমান শিপু স্থানীয় ছাতক সদর থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন আওয়ামীপন্থী ওসি মামলা গ্রহণ করেন নি।
পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে শিপু ছাতক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন, যার সি.আর. নং- ১২১/২০২৪ইং।
মামলায় ভূমিখেকো মাহবুবুর রাজা চৌধুরী রিপনকে প্রধান আসামী করা হয়। এছাড়া তার ভাড়াটে ৫ সন্ত্রাসীর নামও উল্ল্যেখ করা হয় মামলায়।
এতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন মাহবুবুর রাজা চৌধুরী রিপন। প্রথম দফায় ভূমি দখলে ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় দফায় আবারো হামলার পরিকল্পনা করেন তিনি।
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সকালে মৃত আকলিছ মিয়ার ছেলে আওয়ামী সন্ত্রাসী বেলালের নেতৃত্বে সুরুজ আলীর ছেলে ইনাই, আঙ্গুর মিয়ার ছেলে আলমগীরসহ একদল ভাড়াটিয়া স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী পুনরায় হামলা চালায় মেজর আতাউরের ভূমিতে।
এসময় আতাউরের বাড়ীতে থাকা মাহমুদুর রহমান চৌধুরী শিপু ও তার চাচাত ভাই ইংল্যান্ড প্রবাসী মশিউর রহমান চৌধুরী কুটি এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করলে তারা সন্ত্রাসীদের রোষানলে পড়েন।
সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাদের প্রাণে হত্যার চেষ্ঠা করলে শিপু ও কুটি পালিয়ে গ্রামের একতার আহমদের বাড়ীতে আশ্রয় নেন। সরকারী জরুরী সেবা নাম্বর ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে তাদের।
পরবর্তীতে তারা থানা পুলিশের আশ্রয় নিয়ে মামলা করতে চাইলে ছাতক থানায় মামলা না নেয়ায় মেজর আতাউর রহমানের ছোট ছেলে আহমদুর রহমান চৌধুরী টিটু বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার সি.আর. নং- ৫৯৩/২০২৪ইং। এই মামলায় মাহবুব রাজা চৌধুরী রিপনকে প্রধান আসামী করে ৫ জনের নামোল্লেখ করা হয়।
মামলার প্রেক্ষিতে আদালত উক্ত জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করেন । ১৪৪ ধারা জারি করার পরও গত ২৬শে ডিসেম্বর আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উক্ত জায়গায় রিপনের নির্দেশে আবারো স্থাপনা নির্মাণ করতে চাইলে ছাতক থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রিপনের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এমতাবস্থায় মেজর আতাউর রহমানের পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলে জানা গেছে। মেজর আতাউরের ছোট ছেলে আহমদুর রহমান চৌধুরী টিটু বলেন, একের পর এক সন্ত্রাসী হামলায় আমরা আতঙ্কিত।
ভূমিখেকোরা আমাদের বারবার হুমকি দিচ্ছে এবং ২০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করছে। অন্যথায় তারা বড় ধরনের হামলা চালাবে বলে হুমকি দিয়েছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় লোকজন মারফতে জানা যায়, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী নেতা মুহিবুর রহমান মানিক ওরফে বোমা মানিকের নির্বাচনী প্রচারণায় সম্পূর্ণ অর্থের যোগান দেন মাহবুব রাজা চৌধুরী রিপন।
তার নির্দেশে দেশে থাকা তার অনুসারীরা ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের শিমুলতলাস্থ গ্রামের বাড়িতে নৌকার সমর্থনে সভা ও ক্যাম্পেইন করেন। তার এসকল কার্যকলাপের তত্বাবধানে ছিলেন দেশে থাকা ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের মেম্বার নূরুল হক।
এদিকে আওয়ামী সরকারের পতন হলেও দৌরাত্ম থামেনি মাহবুব রাজা চৌধুরী রিপনের। যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে এলাকায় ত্রাস জারি রেখেছিন তিনি।
এমনকি তৎকালীন ফ্যসিষ্ট আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট সিলেটের মাফিয়া খ্যাত সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান পলাতক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানকে দিয়ে সেই সময় বাদীকে নানা ধরনের হুমকি প্রদান করান তিনি।
এছাড়া মাহবুব রাজা চৌধুরী রিপনের কথায় ছাতক থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), ময়মনসিংহ বিভাগ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগ নেতা ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল তদবির করে মামলা না নিতে প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে ছাতক থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া জানান, ১৪৪ ধারা অমান্যের ব্যাপারে আদালতে মামলা করলে এর কঠোর বিচার হবে।
আর হুমকি ধামকির বিষয়ে তিনি বলেন, মামলার বাদি ও হুমকিপ্রাপ্তরা আমার থানায় জিডি করলে আমরা গুরুত্বের সাথে বিষয়টির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করবো।