শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সিন্দুখান ইউনিয়নের সিক্কা গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে চাঁন মিয়া (২২) এর বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মা ফাহিমা আক্তার।
সোমবার (২৭ জুন) দুপুরে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন ধর্ষণের শিকার আলিফা আক্তারের মা ফাহিমা আক্তার।
লিখিত বক্তব্য ফাহিমা আক্তার বলেন, আমি একজন স্বামী পরিত্যাক্তা কর্মজীবী ও দরিদ্র মহিলা। ২০১৪ সালে স্বামী আলতাফ হোসেন নিজামের সাথে আমার তালাক হয়। এরপর নিরোপায় হয়ে একমাত্র কন্যা আলিফা আক্তারকে নিয়ে আমার বড় ভাই আব্দুল করিমের বাড়িতে আশ্রয় নেই।
সেখানে অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছিলাম। পরে ২০১৭ সালে একমাত্র মেয়ের ভরণপোষন ও সংসার চালানোর তাগিদে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া আমার মেয়ে আলিফাকে তার মামা অর্থাৎ আমার বড় ভাইয়ের জিম্মায় রেখে ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকুরী নেই।
প্রতি মাসে আমার মেয়ের ভরণপোষন ও লেখাপড়ার খরচ বাবদ ভাইয়ের কাছে টাকা পাঠাতে থাকি। তিনি বলেন, আমি ঢাকা যাবার পর থেকেই আমার ভাইয়ের ছেলে চাঁন মিয়া (২২) আমার নাবালিকা মেয়ে আলিফা আক্তারকে প্রায় প্রতিদিনই উত্ত্যক্ত করতেন। ব্যাপারটি আমার মেয়ে আমার বড় ভাই আব্দুল করিম (৫০) কে জানালে তিনি বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেননি। একপর্যায়ে অতিষ্ট হয়ে আমার নাবালিকা মেয়ে বিষয়টি মোবাইল ফোনে আমাকে জানালে আমি শ্রীমঙ্গলে এসে মেয়ে আলিফা আক্তারকে ঢাকায় নিয়ে যাই। ঢাকায় নেবার পর আমার বোনের বাসায় রেখে তাকে স্কুলে ভর্তি করি।
মেয়েকে বোনের বাসায় রেখে স্কুলে ভর্তি করার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি আমি ওমান চলে যাই। ওমান যাবার পর আমার মেয়ে ঢাকায় বোনের বাসায় থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকে। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি আমার মেয়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিক্কা গ্রামে আসে।
গ্রামে আসার পর আমার ভাইয়ের ছেলে চাঁন মিয়া আমার মেয়ে আলিফা আক্তারকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আবারো উত্ত্যক্ত করতে থাকে। আমার মেয়ে তাকে বলে ‘তুমি আমার মামাতো ভাই। তোমার সাথে কোন আমি সম্পর্কে জড়াবো না। ওই সালের ২৪ নভেম্বর বিকেলে আমার বড় ভাই আব্দুল করিমের বাসার সকল সদস্য পাশের গ্রামে বেড়াতে যায়। এ সময় আমার মেয়ে আলিফা আক্তারকে তারা ঘরে রেখে যান। পরিবারের সকল সদস্য একসাথে বেড়াতে যাবার পর আমার ভাইয়ের ছেলে চাঁন মিয়া পরিবারের সবাইকে পাশের গ্রামে রেখে রাত আনুমানিক ১০ ঘটিকার সময় বাড়ি ফিরে আসে এবং আমার মেয়ে আলিফা আক্তারকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় তার মোবাইল ফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে হুমকি দেয় এই ঘটনা কাউকে জানালে ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে। ঘটনার পরপরই লোকলজ্জার ভয়ে আমার মেয়ে কাউকে কিছু না বলে দ্রুত ঢাকায় চলে যায় এবং ঢাকায় গিয়েই মোবাইল ফোনে আমাকে ঘটনাটি জানায়। আমি ওমান থেকে ঘটনাটি আমার বড় ভাই আব্দুল করিমকে জানিয়ে বিচার প্রার্থী হলে আমার ভাই আমাকে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে বলেন।
তিনি প্রতিশ্রুতি দেন তার ছেলের সাথে সামাজিকভাবে আমার মেয়ের বিয়ে দেবেন। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি আমি চাকুরী ছেড়ে ওমান থেকে দেশে এসে আমার ভাইয়ের সাথে দেখা করে বিয়ের বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতির কথা বললে তিনি আমাকে বলেন তোমার মেয়ের চরিত্র খারাপ, তার সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবো না। আমি বিষয়গুলো এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানালে আমার ভাই ও ভাইয়ের ছেলেরা আমার উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে আমি বাদি হয়ে আমার বড় ভাই গংদের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক পিটিশন মামলা দায়ের করি। মামলা করার কারনে আমার বড় ভাই ও তার পুত্ররা আমি, আমার মেয়ে আলিফা আক্তার ও আমার পিটিশন মামলার স্বাক্ষীদের উপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি ও তার লোকজন আমার মামলার স্বাক্ষীদের প্রকাশ্যে হুমকি দিতে থাকেন। বিষয়গুলো আমি ও আমার মামলার স্বাক্ষীরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অভিহীত করি। এরই মাঝে গত ১৫ জুন সকাল অনুমান সাড়ে ১১টার দিকে আমার বড় ভাই আব্দুল করিম, তার পুত্ররা এবং তার ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার দায়েরকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলার স্বাক্ষী মো. শাকিল মিয়ার বাড়িতে অনাধিকার প্রবেশ করে মারাত্মক হাড়ভাঙা জখম করে। এ সময় শাকিল মিয়া স্ত্রী রুবিনা আক্তার সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে আসলে’ সন্ত্রাসীরা তাকেও পিটিয়ে আহত ও তার কোলে থাকা ৪৫ দিনের শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হন। আহতদের প্রথমে শ্রীমঙ্গল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাদেরকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আহত শাকিল মিয়ার শ্বাশুড়ি রুজিনা বেগম বাদি হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আমার ভাই আব্দুল করিম (৫০) এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি।
তিনি ধনে-জনে বলিয়ান। ফলে আমার, আমার কন্যা, আমার মামলার মানিত স্বাক্ষীদের জীবন বিপর্যস্থকর অবস্থায়। আমি আইন মানাকারী অসহায়, দরিদ্র ও স্বামী পরিত্যক্তা সংগ্রামী এক নারী। আমার মেয়েকে ধর্ষণ, আমার টাকা ও স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ, আমার মানিত স্বাক্ষীর উপর সন্ত্রাসী হামলা করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। এখন মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে আমাকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে চলেছেন। আসামী চক্রের এ ধরণের হুমকিতে আমি তটস্থ অবস্থায় রয়েছি। আমি, আমার মেয়ে, আমার মানিত স্বাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনানিপাত করছি। এঘটনায় ফাহিমা আক্তার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।