~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
-মঈনুল হক মঈন
তখন রাজা ম্যানশনের পুরাতন ব্যবসায়ী ছিলাম। তিন ছেলের পাসপোর্ট করার ইচ্ছা করেছি। সবচেয়ে ছোটটির বয়স তখন ১০/১১ বছর ছিল। এখন তার বয়স ১৭+। পাসপোর্টের ফির সাথে ২ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়। এটা পাসপোর্ট করার মাঝে শতকরা ৯৮% জানেই না যে, সে ২ হাজার টাকা ঘুষ দিচ্ছে। তারা পাসপোর্টের ফি মনে করে দেয়। আর শতকরা ১% জেনেও অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য হয়। আর ১% আপনার মতো নাছোড়বান্দা। আপনি করতে পারলে তো রেকর্ড ভাংলেন। এই ২ হাজার টাকা হতে ফাইল প্রতি ৫০০ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর্, আর বাকী ১৫০০ অফিসের বিভিন্ন স্তরের অফিসার ও কমচারীরা পান। আমি এই ২ হাজার টাকা করে না দিয়েই পাসপোর্ট করতে চাই।
বিষটি নিয়ে মাকেটের ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করলাম। বেশির ভাগ নিরুৎসাহিত করলেন। অবশ্য একজন সবাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন। আমার কম্পিউটার থেকে ফিলাপ করে বিভিন্ন ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করলাম। তারা প্রত্যেকে অফিসে ফাইল আটকানোর কারণ তুলে ধরেন। একজন শেষ পযার্য়ে বললেন, কলেজের প্রিন্সিপালের পাসপোর্ট করতে কোন আপত্তি নেই মমে কাগজের জন্য আটকাতে পারে। আমি সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে ছেলেদের নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে দাড়ালাম।
ইতোপূর্বে দেখলাম পাসপোর্টের ফাইলগুলো মাকটি দেখেই জমা রাখছে, সময় লাগছে ১ মিনিট থেকে দেড় মিনিট। আমার ছেলেদের ফাইলটি শুধু উল্টে পাল্টে দেখছে। একজন পরে আরেকজন ভালো করে দেখল। কোথায় আটকানোর সুযোগ আছে কি? দীর্ঘক্ষণ ফাইলটি চেক করে আটকানোর কিছু না পেয়ে প্রায় ১৫ মিনিট পরে ফাইলটি ঠিক আছে বলে রেখে দেয়।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সব রাস্তা থেকে ছাড়িয়ে পাসপোর্ট অফিসে পাঠালাম। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে ম্যাসেজ করে জানলাম এক মাস থেকে তারা ফাইলটি প্রিন্টের জন্য পাঠাচ্ছে না। কিভাবে প্রিন্টের জন্য পাঠানো যেতে পারে, এ নিয়ে ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করলাম। একজন বললেন, তিনি অফিসের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তারা চেয়েছে ১৫ শত টাকা। আপনাকে দিতে হবে মোট ২ হাজার টাকা। তাহলে আজই মোবাইলে দেখতে পারবেন যে পাসপোর্টগুলো প্রিন্টে চলে গেছে।
আরেকজন পাসপোর্ট ব্যবসায়ী কাছে পরামর্শ চাইলাম। তিনি বললেন, আপনার ছেলে কোনটি যে কোন পরিস্থিতিতে কথা বলার যোগ্যতা আছে কি না? আমি বললাম, আমার ১০ বছরের ছেলেটি ভালো করে কথা বলতে পারে। তিনি বললেন, তাদের তিন জনকে পাসপোর্টের রিচিটসহ একেবারে এডির রুমে পাঠিয়ে দেন। আশা করি একটা ব্যবস্হা হয়ে যাবে।
তাঁর কথামতো তাদের এডি সাহেবের রুমে পাঠালাম। এডি সাহেব লজেন্স দিয়ে তাদেরকে শান্ত করতে চাইলেন। তারা পাসপোর্ট ছাড়া কোন অবস্থায় আসবে না। নিরুপায় হয়ে এডি জানতে চান, কে তোমাদের নিয়ে এসেছেন? তারা তাদের মায়ের কথা বলল। মাকে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি সরি বলে দুই দিন সময় চাইলেন। তারা অফিস থেকে আসার পরই মোবাইল ম্যাসেজে জানলাম যে প্রিন্টিং দেখাচ্ছে এবং দুই দিন পরে তারা পাসপোর্ট কালেকশনের ম্যাসেজ পেয়ে গিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে আসে।