না ফেরার দেশে চলে গেলেন অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী

 

ডেস্ক রিপোর্টঃঃ

প্রখ্যাত চিকিৎসক ও  অ্যাসোসিয়েশন অব নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়াটেশিয়ান্স ফর সোশ্যাল সার্ভিসেসের (এএনডিএসএস) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী মারা গেছেন। আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল আটটায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক এই অধ্যক্ষের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরীর ভাই ডাক্তার অরূপ রতন চৌধুরী গণমাধ্যমকে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকালে শুভাগত চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর আগে তাঁর কেমোথেরাপি চলছিল। অসুস্থ হয়ে বাসাতেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরে তাঁকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মরদেহ বারডেমের মরচুয়ারিতে রাখা হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে ডা. শুভাগত চৌধুরী দুই কন্যার জনক। তাদের একজন কানাডায় এবং অপরজন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তারা আসার পর শুক্রবার শেষকৃত্য করা হবে বলে জানিয়েছে পরিবার।

 

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরীর বর্ণাঢ্য জীবনী:–

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। চাকরিসূত্রে এক পর্যায়ে ভারতে চলে যায় তার পরিবার। পরে দাদার মৃত্যুর পর পুনরায় পাকিস্তানে ফিরে আসেন। ১৯৬১ সালে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন শুভাগত চৌধুরী।

দুই বছর পর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে ভর্তি হন। তবে সেখানে পড়াশোনা করেননি তিনি। ভর্তি হন সিলেট মেডিকেল কলেজে। ১৯৬৯ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন।

একই বছর বায়োকেমিস্ট্রির শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগ দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে তৎকালীন পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (আইপিজিএমআর) লেকচারার হিসেবে যোগ দেন।

 

সেখান থেকে সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি অর্জন করেন তিনি। এরই মধ্যে ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেল বায়োকেমিস্ট্রির উপর এমফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।

অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী ১৯৮০ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান লন্ডনের সেন্ট টমাস হাসপাতালে চিকিৎসা শিক্ষার উপর গবেষণা শুরু করেন।

 

এ ছাড়া নব্বইয়ের দশকে পুনরায় ইংল্যান্ডে যান অধ্যাপক শুভাগত। তবে সেবার চিকিৎসা শিক্ষার বিশেষজ্ঞ হিসেবে। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেন তিনি।

ডা. শুভাগত এরই মধ্যে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ২০০১ সালের দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন হোন তিনি।

 

২০০৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এক বছর চাকরি করেন। তার পরে বহু বছর ধরে বারডেম হাসপাতালের ডিরেক্টর (ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস) পদে চাকরি করেন তিনি।

নিউইয়র্কের সায়েন্স একাডেমির নির্বাচিত সদস্যও ছিলেন অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। গবেষণা, প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও প্রবন্ধ উপস্থাপনের জন্য তিনি ইংল্যান্ড, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া,

পশ্চিম আফ্রিকাসহ নানা দেশে ঘুরেছেন। প্রাণরসায়ন, পুষ্টি ও চিকিৎসা শিক্ষা পদ্ধতি ছিল তার গবেষণার বিষয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে দেশি-বিদেশি জার্নালে ৫০টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।

এ ছাড়া বইও লিখেছেন ৫০টির বেশি। চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদানের জন্য শেরেবাংলা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও।