ডেস্ক রিপোর্টঃঃ
গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা যুবদল সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজাহান সিদ্দিকীর উপস্থিতিতেই ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিনকে অপহরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরে তাকে পুলিশ ও ছাত্রদল নেতারা উদ্ধার করে গোয়াইনঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। গুরুতর আহত হওয়ায় বর্তমানে ছাত্রদল সভাপতি আজির নগরীর একটি প্রাইভেট হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২৭শে জানুয়ারি) রাত ১২টার দিকে মামার দোকান এলাকার পাশে স্বাদ রেস্টুরেন্ট থেকে জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের নেতেৃত্বে আজির উদ্দিনকে যুবদল সভাপতির উপস্থিতেই মারধর করে তুলে নিয়ে নলজুড়ি জঙ্গলে ফেলে রাখে।
জানা যায়, জাফলংয়ে পাথর কোয়ারি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দুইটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই চলে আসছিল।
এর মধ্যে জেলা বিএনপির সহসভাপতি হাকিম চৌধুরী নিয়ন্ত্রণ করছেন অন্য গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ দল থেকে বহিষ্কৃত শাহ আলম স্বপন।
কিছুদিন থেকে পাথর কোয়ারি নিয়ে বিবদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরমধ্যে গত সোমবার (২৭শে জানুয়ারি) পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন একটি মিংমাংসা শেষে জাফলংয়ের মামারদোকানে অবস্থিত ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ীক পার্টনারকে নিয়ে স্বাদ রেস্টুরেন্ট যান।
তিনি ওই বিচারে উপস্থিত যুবদল সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজাহান সিদ্দিক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে চা খেতে আমন্ত্রণ জানান।
আজিরের আমন্ত্রণে সেখানে চা খেতে যান যুবদল সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজাহান সিদ্দিক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খান।
একপর্যায়ে জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তিনটি নোহাগাড়ি যোগে এসে একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী ছাত্রদল সভাপতি আজির উদ্দিনকে বেদম মারপিট করে তুলে নিয়ে যায়।
গাড়িতে তুলার পরও আজিরকে মারধর করতে থাকে কাশেম বাহিনী। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তামাবিল নলজুড়ীর ফরেস্ট বাগানে।
সেখানে নিয়ে তার সাথে থাকা ব্যবসার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহতবস্থায় আজির উদ্দিনকে উদ্ধার করে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আজির উদ্দিনকে সিলেট প্রেরণ করেন।
এদিকে ছাত্রদল নেতা আজিরকে অপহরণের খবর পেয়ে মধ্যরাতে জাফলং বাজারে দেয় যুবদল ও ছাত্রদলের অস্ত্রের মহড়া চলে।
এ ব্যাপারে পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন জানান, আমি জুমপাড়ে রেকর্ডিয় একটি জায়গা কেনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তবে যুবদল নেতা কাশেম ও তার বাহিনী আমার কাছে বিশাল অঙ্কের চাঁদা ও অংশীদার হতে চায়।
এতে আমি রাজি না হলে আমাকে অপহরণ করে হত্যাচেষ্টা চালায়। আমি বর্তমানে সিলেটের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি।
শুনেছি যুবদল নেতা কাশেম আমাকে হত্যার জন্য ওসমানী হাসপাতালে লোক পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
তবে স্থানীয় ব্যাবসায়ী ও জনসাধারনের কাছ থেকে জানাযায় পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক চাঁদাবাজীর অভিযোগ তিনি বুঙ্গা ব্যাবসায়ী ও স্থানীয় বালু পাথর ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করিয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান বিগত ৫ই আগষ্টের পর থেকে আজির উদ্দিনের বেপরোয়া চাঁদাবজীর সূত্রপাত হয়,যারই ফলশ্রুতিতে এঘটনার সূত্রপাত।
পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিনের এলাকার লোকজন জানান আজির উদ্দিন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজী করে যাচ্ছিলেন এমনকি তিনি ফ্যাসিবাদের দোসর কুখ্যাত চোরাকারবারী প্রয়াত এম পি দিলদার হোসেন সেলিমের সভাস্থলে স্টেজ ভাংচুর মামলার প্রধান আসামী সামছুল ইসলাম ওরফে কালা সামছুর মাধ্যমে পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের চোরাচালান ব্যাবসার নিয়ন্ত্রন করে আসছেন।
এনিয়ে একাধিক প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় একাধিক সংবাদ প্রচারিত হলেও আজির উদ্দিন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে আরো বেপরোয়া ভাবে চোরাচালান বাণিজ্য চালিয়ে জান,মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে আজির উদ্দিন প্রায় কোটি টাকার মালিক বনেগেছেন বলে একাধিক ব্যাবসায়ীরা অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজাহান সিদ্দিকী জানান, আমি ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক জাহিদ স্বাদ রেষ্টেুরেন্টে বসে চা খাচ্ছিলাম। চা খাওয়ার শেষ পর্যায়ে ছাত্রদলের সভাপতি আজির আসে। এসে আমাকে সালাম দেয়। এরমধ্যে জাহিদের মোবাইফোনে একটা ফোন আসে, ফোনটা দেয় জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক কাশেম। সে জিজ্ঞাসা করে জাহিদ ভাই আপনি কোথায়।
আমিতো স্বাদ এ বসা। তখন কাশেম, জাহিদকে বলেন আজির কি আপনার সাথে। এরপর কাশেম বলে আজির আপনার সাথে নাকি। তখন জাহিদ বলেন হ্যাঁ আমার সাথে।
এর একটু পরই কাশেমসহ ১০/১৫জন স্বাদ রেষ্টুরেন্টে এসে আজিরকে তুলে নিয়ে যায়। সবাই স্বশস্ত্র অবস্থায় ছিল আমি কাশেম ছাড়া কাউকে ছিনি না। কাশেম ও আজিরের মধ্যে কোনও বিরোধ থাকতে পারে। কি নিয়ে বিরোধ এই বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ বলেন, জাফলংয়ে যুবদল ও ছাত্রদলের ঘটনায় আমার জেলা যুবদলের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত টিম গঠন করেছি পাশাপাশি এই বিষয়টি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আবুল কাশেম আমাদের জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক এটা সত্য।
এ ব্যাপারে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোওয়ার হোসেন দিনার বলেন, শুনেছি গোয়াইনঘাটে একদল দুর্বৃত্ত ছাত্রদল নেতা আজিরকে তুলে নিয়ে মারধর করেছে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।
এ ব্যাপারে পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের বিট অফিসার এসআই মো. ওবায়াদুল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল নেতা আজির উদ্দিন ও যুবদল নেতা কাশেমের মধ্যে কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল।
এর জের ধরে গত সোমবার (২৭শে জানুয়ারি) রাতে কাশেম ও তার লোকজন মামারবাজার এলাকা থেকে ছাত্রদল নেতা আজির উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে পুলিশকে আজির উদ্দিনেরর লোকজন খবর দিলে পুলিশের একটি দল তাকে উদ্ধার করে। আমরা পরে দুই পক্ষের লোকজনকে শাস্ত করি। এবং আজির উদ্দিনকে পুলিশি স্কট দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই।
এ ব্যাপারে আজির উদ্দিনের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ থানায় পাঠানো হয়নি।