চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের সংঘর্ষ: প্রশ্নবিদ্ধ গোয়াইনঘাটের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা!

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ::

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত জনপদ পর্যটন নগরীর জাফলংয়ে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের দু’পক্ষের মধ্যে একেরপর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

কিন্তু এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় থানা পুলিশ।

ফলে ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অফ কমান্ড। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে গোয়াইনঘাটের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা?

একদিকে পাথর খেকো চাঁদাবাজ-অন্যদিকে ভারতীয় চোরাচালানকারীদের লাইনম্যান নামক চাঁদাবাজ। তাদের মধ্যে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে।

একটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রক জেলা বিএনপির বহিস্কৃত নেতা শাহ আলম স্বপন ও অপর গ্রুপে সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের। স্বপন পাথর লুটপাটে ও কাশেম চোরাচালান নিয়ে।

এক গ্রুপের লোকেরা আরেক গ্রুপের লাইনে ভাগ চাইলেই শুরু হয় সংঘর্ষ। আরও একটি গ্রুপ রয়েছে।

সেই গ্রুপের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে সিলেট জেলা বিএনপির পদবঞ্চিত নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরান।

তিনি নেপথ্যে থেকে প্ররোচনা দিয়ে স্বপন ও কাশেমের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে নিজের ফাঁয়দা হাসিল করছেন। এই তিন গ্রুপের রাজত্বে অস্তির শান্তির জনপদ জাফলং।

গত শুক্রবার রাতে জেলা যুবদল নেতা ভারতীয় চোরাচালানের লাইনম্যান জয়দুল ইসলামের উপর হামলা চালিয়েছে পাথর খেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

গত মঙ্গলবার (২৭শে জানুয়ারি) রাত ১২টার দিকে মামার দোকান এলাকার পাশে স্বাদ রেস্টুরেন্ট থেকে জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের নেতেৃত্বে আজির উদ্দিনকে যুবদল সভাপতির উপস্থিতেই মারধর করে তুলে নিয়ে নলজুড়ি জঙ্গলে ফেলে রাখে।

জানা যায়, জাফলংয়ে পাথর কোয়ারি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দুইটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই চলে আসছিল।

এর মধ্যে জেলা বিএনপির সহসভাপতি হাকিম চৌধুরী নিয়ন্ত্রণ করছেন অন্য গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ দল থেকে বহিষ্কৃত শাহ আলম স্বপন।

কিছুদিন থেকে পাথর কোয়ারি নিয়ে বিবদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরমধ্যে গত সোমবার (২৭শে জানুয়ারি) পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন একটি মিংমাংসা শেষে জাফলংয়ের মামারদোকানে অবস্থিত ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ীক পার্টনারকে নিয়ে স্বাদ রেস্টুরেন্ট যান।

তিনি ওই বিচারে উপস্থিত যুবদল সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজাহান সিদ্দিক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে চা খেতে আমন্ত্রণ জানান।

আজিরের আমন্ত্রণে সেখানে চা খেতে যান যুবদল সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহজাহান সিদ্দিক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খান।

একপর্যায়ে জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তিনটি নোহাগাড়ি যোগে এসে একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী ছাত্রদল সভাপতি আজির উদ্দিনকে বেদম মারপিট করে তুলে নিয়ে যায়।

গাড়িতে তুলার পরও আজিরকে মারধর করতে থাকে কাশেম বাহিনী। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তামাবিল নলজুড়ীর ফরেস্ট বাগানে।

সেখানে নিয়ে তার সাথে থাকা ব্যবসার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

খবর পেয়ে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের এস আই ওবায়দুল হাসান সঙ্গীয়ফোর্স নিয়ে নলজুরী থেকে ভিকটিম আজির উদ্দিনকে উদ্ধার করে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেন। কিন্তু ওই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ মামলাটি রেকর্ডভূক্ত করেনি।

এদিকে ছাত্রদল নেতা আজিরকে অপহরণের খবর পেয়ে মধ্যরাতে জাফলং বাজারে দেয় যুবদল ও ছাত্রদলের অস্ত্রের মহড়া চলে।

তবে স্থানীয় ব্যাবসায়ী ও জনসাধারনের কাছ থেকে জানাযায় পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিনের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক চাঁদাবাজীর অভিযোগ তিনি বুঙ্গা ব্যাবসায়ী ও স্থানীয় বালু পাথর ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করিয়ে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান বিগত ৫ই আগষ্টের পর থেকে আজির উদ্দিনের বেপরোয়া চাঁদাবজীর সূত্রপাত হয়,যারই ফলশ্রুতিতে এঘটনার সূত্রপাত।

পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিনের এলাকার লোকজন জানান আজির উদ্দিন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজী করে যাচ্ছিলেন এমনকি তিনি ফ্যাসিবাদের দোসর কুখ্যাত চোরাকারবারী প্রয়াত এম পি দিলদার হোসেন সেলিমের সভাস্থলে স্টেজ ভাংচুর মামলার প্রধান আসামী সামছুল ইসলাম ওরফে কালা সামছুর মাধ্যমে পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের চোরাচালান ব্যাবসার নিয়ন্ত্রন করে আসছেন।

এনিয়ে একাধিক প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় একাধিক সংবাদ প্রচারিত হলেও আজির উদ্দিন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে আরো বেপরোয়া ভাবে চোরাচালান বাণিজ্য চালিয়ে জান,মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে আজির উদ্দিন প্রায় কোটি টাকার মালিক বনেগেছেন বলে একাধিক ব্যাবসায়ীরা অভিযোগ করেন।

এরই জের ধরে গত শুক্রবার রাতে সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের সহযোগী যুবদল নেতা জয়দুল ইসলামের উপর হামলা করে গাড়ি ভংচুর করে।

পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। জয়দুল ইসলামের অবস্তা আশঙ্কাজনক।

বর্তমানে ওসমানী মেডিকেলের চতুর্থ তলায় ৭নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের লোকদের হামলায় গুরুতর আহত হয় আজির উদ্দিন।

পরে সে সিলেট নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা সম্পন্ন করে। সে সুস্থ্য হয়ে দলবল নিয়ে আবুল কাশেমের সহযোগী জয়দুল ইসলামের উপর হামলা করে।

আর এসকল ঘটনার জন্য পুলিশকে দোষারোপ করেছেন স্থানীয়রা। আজির উদ্দিনের উপর হামলার ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ। ফলে আজিররের লোকজন ক্ষীপ্ত হয়ে আইন তাদের নিজের হাতে তোলে নিয়েছেন।

উভয় পক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি ) সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, উভয় পক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবার কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।