কিডনি বেচাকেনার ভয়ংকর এক চক্র, গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

সিনিয়র রিপোর্টার;

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচার সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজধানীর ভাটারা, বনশ্রী ও মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১ এর একটি দল।

পরের দিন বুধবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানান র‌্যাব একের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমে কিডনি কেনাবেচা এ চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। তারা মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কিডনি কেনাবেচার এ অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। চক্রের সদস্যরা পাশের দেশে অবস্থানরত কিডনি কেনাবেচা সদস্যদের চক্রের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক মানুষকে সেদেশে পাচার করেছে।

চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে এবং সামাজিক মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। চক্রের দ্বিতীয় দলটি প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের খুঁজে বের করে।

এরপর তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর আরেকটি গ্রুপ ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজগুলো শেষ করে রাখে।

ব্লাড ম্যাচিং হওয়া এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে, তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ডোনারকে পাশের দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

এই চক্রের সঙ্গে পাশের দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র কিডনি ডোনারকে বিদেশের মাটিতে গ্রহণ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে আবারও দেশে ফেরত পাঠানোর যাবতীয় কাজ শেষ করে।

একটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগী প্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে মাত্র চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা দিতো। আগাম দুই লাখ টাকা দেয়া হতো। কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর পুরো টাকা না দেয়ারও অভিযোগও আছে।

চক্রের মূলহোতা ও অন্যতম অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম মিঠু ২০১৬ সালে নিজের চিকিৎসার জন্য পাশের দেশে যায়। সেখানে থাকার সময় সে কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখতে পায় এবং সে নিজেই কিডনি প্রতিস্থাপনের অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা শুরু করে।

পাশের দেশে অবস্থানরত কিডনি কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে সে বাংলাদেশে কিডনি কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করে। অনলাইনের মাধ্যমে আগ্রহী বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহ করে সব কাজ শেষ করতেন। এখন পর্যন্ত তার মাধ্যমে ৫০ এর বেশি কিডনি কেনাবেচা হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা মামুন বলেন, চক্রের অপর সদস্য মিজানুর রহমান কিডনি ডোনারদের পাশের দেশে প্রয়োজনীয় পাসপোর্ট ও অন্যান্য দরকারি নথি তৈরি করে দিতো। সে সব ডোনারের কাগজপত্রে ঝামেলা তাদেরগুলো জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে দিতো মিজান।

গ্রেপ্তার সাইমন ও আল মামুন ওরফে মেহেদী ছয় মাস আগে চক্রটির মাধ্যমে জনপ্রতি ৪ লাখ টাকায় কিডনি বিক্রয় করে। পরবর্তীতে দ্রুততম সময়ে অধিক টাকা উপার্জনের লোভে তারা এই চক্রটির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এবং কিডনি ডোনার ও ক্রেতা সংগ্রহে লিপ্ত হয়।

তারা নিজেদের সুস্থতার প্রমাণ দেখিয়ে অন্যান্য ডোনারদের কিডনি বিক্রয়ে আগ্রহী করত। তারা এখন পর্যন্ত ১০ জনের কিডনি কেনাবেচা করেছে। এছাড়াও গ্রেপ্তার রাসেল হোসেন ও তারা দুইজন মিলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রলোভন দেখিয়ে সম্ভাব্য ডোনারদের সংগ্রহ করতো।